ভাবি যখন বউ - পর্ব ০৮-০৯ । Golpo Porun

ভাবি যখন বউ

(জুয়েল)

Bhabhi jokon bou
This Photo is from Google

ভাবি যখন বউ - পর্বঃ ৮

অবন্তী আমাদের এই অবস্থা দেখে উঠে চলে গেলো। তারপর বাইরে এসে আমি আবারও লিমার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় অবন্তী কোথায় থেকে এসে আমার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।

আমিঃ কি ব্যাপার এই ভাবে ধরে নিয়ে আসলেন কেন? 

অবন্তীঃ ওই মেয়ে দেইখলেই কথা বলতে মন চায়? 

আমিঃ তাতে আপনার সমস্যা কোথায়? 

অবন্তীঃ আছে অনেক সমস্যা। তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না। 

আমিঃ কেন?

ভাবি যখন বউ - সকল পর্ব

অবন্তীঃ সেটা না জানলেও চলবে। 

আমিঃ আমার যেহেতু কেউ নেই সেহেতু আমি অন্যদের সাথে অবশ্যই কথা বলবো। 

অবন্তীঃ না তুই কারো সাথে কথা বলতে বলতে পারবি না। আর যেন ওই মেয়েটার সাথে না দেখি। 

আমিঃ সমস্যা কোথায়? 

অবন্তীঃ বলছিনা কথা না বলতে? 

আমিঃ যদি বলি? 

অবন্তীঃ তাহলে আব্বুকে কল দিয়ে বলবো তুমি আমাকে ছড় মেরে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছো। 

আমিঃ কিহ! আপনি এই কথা বলতে পারবেন? 

অবন্তীঃ হুম। এখন পাঞ্জাবী টা খুলে শুয়ে পড়ো। 

আমিঃ আপনি কোথায় ঘুমাবেন? 

অবন্তীঃ পরে দেখা যাবে। তুমি শুয়ে পড়ো। 

তারপর আমি পাঞ্জাবী টা খুলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, আপাতত কেউ নাই, একা একা শুয়ে আছি। 

শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি অবন্তী এমন রাগ দেখালো কেন? সেও কি আমাকে ভালোবাসে নাকি? ধুর এটা হয় না, সে আমাকে এখনো দেবরের মতোই দেখে। বুঝতেছিনা কেন যে অবন্তী আমাকে মেনে নিচ্ছে না আল্লাই ভালো জানে। 

ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না। 

সকালে ঘুম থেকে উঠতে যাবো এমন সময় বুকের উপর ভারি কিছু একটা অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে। 

এটা কি হলো? আমি তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারছিনা। বাহ! এটা তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো। 

আমি উঠতে গিয়েও উঠিনি, এই প্রথম অবন্তী আমাকে স্পর্শ করলো তাও এমনটা একটা মুহূর্ত। আমি কেন পৃথিবীর কোনো পুরুষই এই অবস্থা থেকে উঠবে না। 

আমি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি, দেখি অবন্তী কি করে? 

কিছুক্ষণ থাকার পর অবন্তী উঠলো, উঠে শাড়ি ঠিক করে নিলো। আমি যেন না বুঝতে পারি সে আস্তে করে রুম থেকে চলে যায়। 

আমি মনে মনে হাসতেছি, বালিকা নিজের জামাইয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাইছো সেটা দেখলে সমস্যা কোথায়? 

যাক একটু পর সে আবার রুমে আসলো। এসে.... 

অবন্তীঃ জুয়েল! এই জুয়েল!! 

আমি ঘুমের ভান ধরে বললাম.... 

আমিঃ হুমম,,, 

অবন্তীঃ এই উঠো, অনেক দেরি হয়ে গেছে। 

আমিঃ আপনি যান, আমি আরেকটু ঘুমাই। 

অবন্তীঃ না আর ঘুমাতে হবে না। উঠো উঠো। একটু পর বর পক্ষ এসে যাবে। 

আমিঃ আচ্ছা উঠছি। এই একটা কথা বলেন তো? 

অবন্তীঃ কি?

আমিঃ আপনি কালকে রাতে কোথায় ছিলেন? 

অবন্তীঃ মাহির সাথে। কেন? 

আমিঃ না এমনি। কেউ একজন আমার পাশে শুয়েছিলো, মনে হয় লিমা হবে। (রাগানোর জন্য)

অবন্তীঃ কিহ, আবারও অই মেয়েটার কথা বলছো? (রাগ দেখিয়ে)

আমিঃ তাহলে কে হতে পারে? আপনি কাওকে দেখেছেন?

অবন্তীঃ এই নাও তোমার ব্রাশ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। 

এ কথা বলে অবন্তী এক রকম চোরের মতোই রুম থেকে চলে গেলো। আমি বসে বসে হাসতেছি। 

ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম। 

বাইরে গিয়ে লিমার সাথে দেখা হয়,,, 

লিমাঃ কিরে তুই বেঁচে আছিস? 

আমিঃ তোর কি মনে হয়? 

লিমাঃ আমার তো মনে হয় তুই মারা গেছিস। তোর আত্না ভুত হয়ে ঘুরতেছে। 

আমিঃ হা হা হা হঠ্যাৎ করে এ কথা বললি কেন?

লিমাঃ কালকে রাতে তোর বউ যেই ভাবে তোরে ধরে নিয়ে গেছে সেটা দেখে মনে হইছে যে তুই আজকে শেষ। 

আমিঃ আরে না, তেমন কিছু না। 

লিমাঃ তোকে তো মনে হয় ভালোবাসে। 

আমিঃ আরে না, অবন্তী নিজেও ঠিক মতো কথা বলে না, অন্য মেয়েদের সাথেও কথা বলতে দেয়না। একটা প্যারার মধ্যে আছি। 

লিমাঃ হুম বুঝছি। আচ্ছা আর কয়েকটা ডোজ দিবো তোর বউ কে! 

আমিঃ আর দরকার নেই দোস্ত। যেগুলো দিছস সেগুলোতেই আমার ১২ টা বাজছে। আর দিলে কি করবে আল্লাই জানে। 

লিমাঃ সমস্যা নেই, হালকা করে একটা দিয়ে দিবো। 

আমিঃ আচ্ছা দিস। 

এমন সময় অবন্তী কল দিলো। 

অবন্তীঃ এই জুয়েল কই তুমি? 

আমিঃ আছি বাইরে। 

অবন্তীঃ বাইরে কি? দরকারের সময় খুঁজে পাই না। 

আমিঃ কি বলুন। 

অবন্তীঃ তাড়াতাড়ি রুমে আসো।

আমিঃ কেন?

অবন্তীঃ ধুর তুমি এতো কথা বলো কেন? আসতে বলছি আসো। 

আমিঃ আচ্ছা আসতেছি। 

কলটা কেটে দিলাম,,, 

লিমাঃ কিরে কে কল দিলো? 

আমিঃ তোর ভাবি,রুমে যেতে বলছে। 

লিমাঃ মনে হয়ে আমাকে তোর সাথে দেখেছে। যা তোর খবর আছে। 

আমিঃ তুই দাঁড়া আমি একটু আসছি। 

লিমাঃ যা বেঁচে থাকলে দেখা হবে। ওপাড়ে ভালো থাকিস বন্ধু হা হা হা

আমি; ফাজিল, থাক আমি আসছি। 

তারপর রুমে গেলাম। অবন্তী দেখেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। শাড়ি একটাকে উল্টোপাল্টো করে পড়ে আছে। 

আমিঃ কি ব্যাপার আপনার এই অবস্থা কেন? 

অবন্তীঃ এই তুমি আসছো,,,

আমিঃ হুম। কি হইছে? 

অবন্তীঃ ধুর একা একা শাড়ি পড়া যায় নাকি? দরজাটা লাগিয়ে এদিকে আসো। 

আমিঃ দরজা কেন লাগাবো?

অবন্তীঃ তো কি দরজা খুলেই শাড়ি পরবো? যাও লাগিয়ে আসো। 

আমি গিয়ে দরজা লাগিয়ে আসলাম,, 

অবন্তীঃ এই শাড়ির আঁচল টা একটু ধরো তো?

আমি তো অবাক হয়ে গেলাম।এটা কি বলে? 

অবন্তীঃ ওই আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? 

আমিঃ না মানে স্বপ্ন নাকি বাস্তব সেটাইতো বুঝতেছি না। 

অবন্তীঃ সামান্য শাড়িটা ধরতে বলেছি এতেই এই অবস্থা,অন্য কিছু বললে কি হতো?

আমিঃ অন্য কিছু কি? 

অবন্তীঃ ওই এতো কথা বলো কেন? যেটা করতে বলেছি সেটা করো। 

আমি গিয়ে হাটু গেড়ে বসে শাড়ির কচিগুলো ধরলাম। 

আমিঃ আপনি শাড়ি পড়তে পারেন না?

অবন্তীঃ পারি তবে পুরোপুরিভাবে পারিনা। 

আমিঃ তাহলে কাল কিভাবে পড়েছেন? 

অবন্তীঃ বাসা থেকে আসার সময় আম্মু পড়িয়ে দিয়েছে। 

আমিঃ ও আচ্ছা। 

অবন্তীঃ যাও তুমি গিয়ে গোসল করে রেড়ি হয়ে নাও। একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। 

তারপর গোসল করে রেড়ি হয়ে নিলাম। অবন্তী নিজের হাতেই আমার শার্টের বুতাম লাগিয়ে দিলো। 

একটা জামাই জামাই ভাব আসলো শরীরে। আমি রেড়ি হয়ে বাইরে গেলাম। মাহির বাবা ডেকে নিয়ে গেলো উনার সাথে একটু দেখাশোনা করার জন্য। 

আমি উনার সাথে গেলাম। বরপক্ষ চলে আসলো। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরু হলো কাজের মাঝখানে আমি নিজেও খেয়ে নিলাম। 

কিছুক্ষণ পর মাহিকে মানে পাত্রিকে আনা হলো, মাহির সাথে অবন্তী সহ আরো কতো গুলো মেয়ে ছিলো। অবন্তী দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম। কালো একটা শাড়িতে একটু অন্যরকম লাগছে। 

আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দিলো তাকিয়ে দেখি লিমা.... 

লিমাঃ কিরে নিজের বউকে কেউ এভাবে দেখে? 

আমিঃ আরে না, আমি বিয়ে দেখতেছিলাম। 

লিমাঃ বুঝি বুঝি ডালমে কুচ কালা হে। আচ্ছা বাদ দে, তুই খেয়েছিস? 

আমিঃ হুম। তুই? 

লিমাঃ ভেবেছিলাম আরো পরে খাবো, আম্মু জোর করে খাইয়ে দিছে। 

আমিঃ ভালো করছে। 

লিমাঃ এই ১৫ তারিখ তো রেজাল্ট দিবে, জানিস? 

আমিঃ কিসের রেজাল্ট?

লিমাঃ আরে আমাদের অনার্স পরীক্ষার। 

আমিঃ ও আচ্ছা। তোর নাম্বারটা দেতো। তোদের অফিসে যাওয়ার আগে কল দিবো। 

লিমাঃ ওকে,  এই নে..... (নাম্বার টা বললো)

আমিঃ দোস্ত তোরে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। 

লিমাঃ হইছে, চল তোর বউকে একটু রাগিয়ে দিই। 

আমিঃ কেমনে? 

লিমাঃ গেলেই দেখবি। 

তারপর লিমা আমার একটা হাত ধরে স্টেজে নিয়ে যায়। তারপর বর আর কণে এর মাঝে বসিয়ে ফটো তুলা শুরু করলো। অবন্তীকে বললো আমাদের ছবি তুলে দিতে এটা দেখে অবন্তী রাগে লাল হয়ে গেছে। আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। 

আমিও একটু রাগানোর জন্য লিমার সাথে ক্লোজ হয়ে বসে ছবি তুলতেছি। 

এভাবেই দিনটা চলে গেলো। বিকালবেলা বসে আছি এমন সময় বস কল দিলো। 

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম,,,

বসঃ হুম, জুয়েল কোথায় তুমি? 

আমিঃ আমি তো একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছি। 

বসঃ কালকে কাজে আসবে। 

আমিঃ কিন্তু বস বিয়ে তো এখনো শেষ হয়নি বউভাত বাকি আছে। 

বসঃ তোমাকে আর কাজে আসতে হবে না। তুমি বিয়ে খাও,,, 

আমিঃ না বস, ঠিক আছে আমি কালকে আসবো।

বসঃ মনে থাকে যেন। নাহলে চাকরি ডিসমিস।

কলটা কেটে দিলো। আমি মনে মনে ভাবতেছি শালা লিমাদের ওখানে চাকরিটা একটু পাই তখন দেখবি। তোর এই ব্যবহারের ফল আমি সুদেআসলে দিবো। 

অবন্তীর কাছে গেলাম,,,,, 

আমিঃ একটু এদিকে আসেন তো। 

অবন্তীঃ আমাকে কেন ডাকতেছো? তোমার তো আর মেয়ে ফ্রেন্ডের অভাব নেই। 

আমিঃ দেখেন বাজে কথা না বলে সাইডে আসেন। 

অবন্তীঃ কি হইছে?

আমিঃ আপনি থাকেন আমি চলে যাচ্ছি। 

অবন্তীঃ চলে যাচ্ছো মানে, কোথায় যাচ্ছো? 

আমিঃ বস কল করেছিলো, কালকে কাজে না গেলে চাকরি থাকবে না। এখান থেকে তো আর কাজে যাওয়া সম্ভব না। তাই বলছিলাম আপনি থাকেন বিয়ে শেষ হলে তারপর আমি এসে নিয়ে যাবো।

অবন্তীঃ দরকার নেই। দাঁড়াও আমিও যাবো। 

আমিঃ মানে কি! এখনো বিয়ে শেষ হয়নি। 

অবন্তীঃ আসলটা শেষ, আর এখানে থেকেও কোনো মজা পাবো না। মাহি তো চলে যাবে। সো দাঁড়াও আমিও আসছি।

কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। লিমাকে ইশারায় বলেছি মোবাইলে কথা বলবো। 

তারপর একটা CNG নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। 

আম্মুঃ কিরে চলে আসলি যে? বিয়ে শেষ নাকি? 

আমিঃ না, কাজ আছে। বস কল করেছিলো তাই। 

তারপর রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেলাম। 

আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম, আসার পর পুরো ঘটনা ওর সাথে শেয়ার করলাম। 

আয়মানঃ বাহ! তার মানে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে? 

আমিঃ এখনো সিউর না। আরো কয়েকদিন দেখি। 

আয়মানঃ লিমার ডোজটায় কাজ হয়েছে না হলে অবন্তী এতো সহজে নরম হতো না।

আমিঃ হুম বন্ধু ঠিক বলছিস। লিমা অনেক হেল্প করেছে। 

আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে খেয়ে রুমে গেলাম। দেখলাম অবন্তী বিয়ে তোলা ছবি গুলো দেখতেছে। আমি গিয়ে কাঁথা আর বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে ঘুমানোর জন্য রেড়ি হচ্ছি। 

অবন্তীর দিকে বার বার তাকাচ্ছি সে কিছু বলে কিনা। কিন্তু না কিছু বললো না। 

আমিও শুয়ে গেলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি, অবন্তী তো কিছুই বললো না। তাহলে বিয়েতে কেন শুয়েছিলো একসাথে? 

মনে হয় এটা অন্যদের দেখানোর জন্য, মান সম্মান রক্ষার্থে এমনটা করেছে হয়তো। আমার কপালে এগুলো নেই। তাই এগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই বেটার। 

অবন্তী আগেও আমাকে মেনে নেয় নি, এখনো নিচ্ছে আর ভবিষ্যৎ এ নিবে বলে মনে হয় না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। 

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করতেছে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে। 

আমিঃ কিছু বলবে? 

বাবাঃ তোর কাছে কিছু টাকা হবে? তোর মায়ের মেডিসিন শেষ। 

আমি জানি পকেটে মাত্র ২০ টাকা আছে, কারণ যেগুলো ছিলো সব বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে। যাতায়াত, বিয়ের উপহার, অবন্তীর শাড়ি পুরো মাসের বেতন শেষ। কি বলবো বুঝতেছি না। 

আমিঃ আচ্ছা প্রেসক্রিপশন টা আমাকে দাও আমি আসার সময় নিয়ে আসবো। 

তারপর বাবার থেকে প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম কিভাবে কি করবো। 

হেটে হেটে কাজে চলে গেলাম। প্রতিদিনের মতো সেই দোকানে দোকানে মাল দেওয়া আর ভ্যান ঠ্যালা। 

কাজ শেষ করে আসার সময় বসের কাছে কিছু টাকা চাইলাম। শালা টাকাতো দিলোই না, উলটো আরো ঝাড়ি দিলো। 

পরে আয়মানকে কল করে দেখা করতে বলি, ওর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আম্মুর জন্য মেডিসিন গুলো কিনে নিয়ে আসি। 

এভাবে দিন যেতে লাগলো, কয়েকদিন পর আমাদের রেজাল্ট দিবে। এটা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নেই। কারন আমার পরীক্ষা যে খারাপ হইছে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ফেল করবো এটাই শিউর। এদিকে অবন্তী রেজাল্টের চিন্তায় শেষ। 

দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন চলে আসলো। আমি যথারীতি কাজে চলে গেলাম। 

দুপুরবেলা অবন্তী আমাকে কল দিয়েছে,,, 

অবন্তীঃ এই জুয়েল, তুমি কোথায়? 

আমিঃ কাজে আছি কেন কি হইছে? 

অবন্তীঃ রেজাল্ট দিয়ে দিছে, আমি পাশ করেছি। 

আমিঃ congratulation. 

অবন্তীঃ thanks. এই তোমার রোল নাম্বার আমি ভুলে গেছি আমাকে বলো তো। 

আমিঃ আমি নিজেও ভুলে গেছি, এডমিন কার্ড দেখো।

অবন্তীঃ আচ্ছা দেখতেছি। 

তারপর কলটা কেটে দিলো। পাশে বস ছিলো, আমার মোবাইলে কথা বলা দেখে উনি বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো...

বসঃ ওই মিয়া কাজ করতে আসো নাকি প্রেম করতে? 

আমিঃ সরি বস! 

বসঃ আরে রাখো তোমার সরি। মোবাইল বন্ধ করো মিয়া। এতোই যখন বউ বউ করো তাহলে কাজে আসো কেন? বউ এর কাছে থাকলেই তো পারো। 

এই শালার উপর তো রাগ হচ্ছেই সাথে অবন্তীর উপরও। কল দেওয়ার আর সময় পেলো না। রেজাল দিয়েছে তো কি হইছে বাসায় গেলেও তো বলা যেতো। আমি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখে দিলাম। 

তারপর কাজ শেষ বসের কাছে টাকা চাইলাম উনি মুখের উপর বলে দিয়েছে মাস শেষ হওয়া ছাড়া কোনো টাকা দিবে না। যদি অতিরিক্ত করি তাহলে অতিরিক্ত কাজের টাকা দিবে। 

আমি আরো দুই ঘন্টা করে ১০০ টাকা নিলাম। তার হিসেবে নাকি আরো কম পাবো। 

তারপর গেলাম টিউশনিতে, পড়ানোর এক পর্যায়ে ছাত্রের মা আসলো। টাকা হাতে নিয়ে  দাঁড়িয়ে আছে। 

আমিঃ আন্টি কিছু বলবেন? 

আন্টিঃ এই নাও তোমার এই মাসের বেতন। 

আমিঃ কিন্তু আন্টি মাস তো এখনো শেষ হয়নি। 

আন্টিঃ জানি, তোমাকে আর আসার দরকার নেই। আমি ওর জন্য নতুন টিচার দেখেছি। 

আমিঃ কিন্তু আন্টি কেন? 

আন্টিঃ তুমি রাত করে আসো, তার উপর দেখে মনে হয় ক্লান্ত, তোমার পড়ানো নাকি ওর কাছে ভালো লাগে না। আর....

আমিঃ আর কি? 

আন্টিঃ আর তুমি নাকি ভ্যান গাড়ি ঠ্যালো, তোমাকে আজকে সকালে ওর ফ্রেন্ডেরা সবাই দেখেছে। তারপর স্কুলে গিয়ে ওরে অনেক রকম কথাবার্তা বলেছে। ঠাট্টা করেছে। 

আমি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। শালা ভ্যান গাড়ির সাথে পড়ানোর কি সম্পর্ক এখনো আমার মাথায় আসছে না।

কিছু না বলে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। 

এবার কি হবে? টিউশনির টাকাটা দিয়ে আব্বু আম্মুর মেডিসিন কিনি। কিন্তু এবার কি হবে? 

হঠ্যাৎ করেই অবন্তীর রেজাল্টের কথা মনে পড়লো, আন্টির দেওয়া বেতন গুলো দেখতে লাগলাম। পুরো টাকা দেয়নি। অর্ধেক দিয়েছে। 

বাঁশ আসকে সব দিক দিয়েই আসে, অবন্তীর জন্য ২ কেজি মিষ্টি নিলাম। 

তারপর হেটে হেটে বাসায় গেলাম। কলিং বেল দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো তাকিয়ে দেখি......

চলবে......

ভাবি যখন বউ - পর্বঃ ৯

তারপর হেটে হেটে বাসায় গেলাম। কলিং বেল দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো, অবন্তী আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। 

আমি তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলাম। কিছু বলার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। 

একটু পর আম্মু রুম থেকে বের হয়ে দেখে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, আম্মু হাসতে হাসতে আমার রুমে চলে যায়। আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। 

তারপর অবন্তী আমাকে ছাড়িয়ে বলতে থাকে,,,, 

অবন্তীঃ জুয়েল আমি পাশ করেছি। 

আমিঃ Congratulation. এই নিন,, মিষ্টি গুলো নিয়ে যান। 

অবন্তীঃ ওই আমি পাশ করছি সেজন্য আমি এতো খুশি হয়নি। খুশি হইছি এই জন্য, তুমিও ভালো পাশ করছো। 

আমিঃ কিহ! 

ভাবি যখন বউ - সকল পর্ব

অবন্তীঃ হুম তুমিও করছো, শুধু পয়েন্ট টা একটু কম,এটা কোনো ব্যাপার না। 

আমি আর কোনো কথা না বলে অবন্তীকে কোলে নিয়ে নিলাম, আসলে খুশিতে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি। 

ওরে কোলের কারণে ও আমার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে রইলো। 

আমিঃ সরি, আসলে এমন একটা খুশির খবর শুনে নিজেকেকে স্থির রাখতে পারিনি। 

অবন্তীঃ ইটস ওকে। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। 

আমি রুমে চলে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম এবার লিমাদের অফিসে যাবো। দেখি চাকরিটা হয় কিনা। 

ফ্রেশ হয়ে আব্বু আম্মুর কাছে আসলাম, আব্বু আম্মু দুজনেই অনেক খুশি। বসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তারপর খাওয়াদাওয়া করে রুমে চলে গেলাম। অবন্তী রুমে আসার আগেই শুয়ে পড়লাম। 

একটু পর সে আসলো, আমার পাশে বসলো, কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে খাটে চলে গেলো। অবন্তী ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি উঠলাম। 

উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাইয়ার কাছে যাবো। আজকে এমন একটা দিনে ভাইয়া থাকলে হয়তো তিনি আমাদের চাইতেও বেশি খুশি হতেন। 

আমি উঠে অজু করে ভাইয়ার কবরের দিকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি কবরের কাছে গেলাম। আমি জানি ভাইয়া আমাকে দেখে অনেক খুশি হবে। আমি কবরের মাথার পাশে গিয়ে বসলাম। 

"" ভাইয়া কেমন আছিস? এতো রাতে তোরে ডিস্টার্ব করার জন্য সরি। জানি তুই অনেক বিরক্ত হবি কিন্তু কি করবো বল কথা গুলো তোকে না বললে যে আমার ঘুম আসবে না। 

আজকে আমাদের রেজাল্ট দিয়েছে। যদিও রেজাল্ট নিয়ে আমার তেমন একটা মাথাব্যথা নেই, আমি চিন্তায় ছিলাম অবন্তী কে নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ সে পাশ করেছে। আমিও করেছি কিন্তু সেটা হয়তো তোর মনের মতো হবে না। 

ভাইয়া তোর স্বপ্ন টা পূরন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তোর আর অবন্তীর ইচ্ছা ছিলো অবন্তী যেন গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে। 

আজকে সেই দিন যেটার জন্য তুই স্বপ্ন দেখতি, আজকে সবই ঠিক আছে শুধু তুই নেই আমাদের পাশে। তোর স্বপ্ন গুলো আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও পূরণ করবো। 

জানিস ভাই আমারও অনেক।ইচ্ছা ছিলো খুব ভালো একটা রেজাল্ট করার জন্য কিন্তু কি করবো বল সেটা হয়তো আমার কপালে নাই। তারপরও যে পাশ করেছি সেটার জন্য আলহামদুলিল্লাহ।

ভাইয়া তুই যদি থাকতি হয়তো আমিও ভালো কিছু করতাম। তুই চলে যাওয়ার পর থেকে আমার পুরো পৃথিবীটাই পালটে গেছে। 

এখন বুঝতে পারছি তুই কষ্ট করে আমাদের স্বপ্ন গুলো পূরণ করেছিস, এতো কষ্ট করার পরও নিজেকে সব সময় হাসিখুশি রেখেছিস। 

ভাই তোর জন্যতো আমি কিছুই করতে পারিনি,সারা জীবন তুই আমাদের জন্য করে গেছিস। 

জানিস ভাইয়া অবন্তী এখনো আমাকে মেনে নেয়নি, হয়তো নিবেও না। কিন্তু তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। সে এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে। 

অবন্তীর জন্য নাহয় আমি আমার জীবনটা স্যাকরিপাইস করে দিলাম। সে যেমন থাকতে চায় তেমনই থাকুক। 

ভাই আমার টাকা পয়সা কিছুর দরকার নেই শুধু তোকে দরকার। তুই আরেকবার আমাদের মাঝে ফিরে আয়, কখনো তোকে হারাতে দিবো না। প্লিজ ভাই আয় আরেকবার। """

আর কোনো কথাই আসছে না মুখদিয়ে। বসে বসে ভাইয়ার স্মৃতি গুলো মনে করতে লাগলাম, তারপর উঠে কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে আসলাম। 

এসে দেখি অবন্তী মন খারাপ করে বসে আছে। 

আমিঃ কি ব্যাপার আপনি ঘুমান নি? 

অবন্তীঃ কোথায় গিয়েছিলে??? 

আমিঃ এই তো একটু বাইরে, ঘুম আসছেনা তাই ঘুরে এলাম। 

অবন্তীঃ মিথ্যা বলো কেন? সত্যি করে বলো। 

আমিঃ ভাইয়ার কবরের কাছে। 

অবন্তীঃ এতো রাতে? 

আমিঃ জিয়ারত করতে গেছিলাম। 

অবন্তীঃ কি কি বলেছো তোমার ভাইয়াকে? 

আমিঃ কিছু না, জাস্ট জিয়ারত করে চলে আসছি। 

অবন্তীঃ আমি সব শুনেছি। 

আমিঃ আপনি কিভাবে শুনেছেন? 

অবন্তীঃ তোমার পিছনে পিছনে গিয়েছিলাম। 

আমিঃ রাত অনেক হইছে ঘুমিয়ে পড়ুন। (কথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য)

অবন্তী কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি গিয়ে শুয়ে পরলাম। 

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাবো এমন সময় অবন্তী সামনে আসলো....

আমিঃ কিছু বলবেন?

অবন্তীঃ হুম একটা কথা ছিলো। 

আমিঃ হুম বলেন। 

অবন্তীঃ আমি একটা আমাদের বাসায় যাবো, যদি দিয়ে আসতে ভালো হতো। 

আমিঃ কিন্তু আমি তো কাজে যাচ্ছি, আর হঠ্যাৎ করে ওই বাসায় কেন? 

অবন্তীঃ রেজাল্ট দিয়েছে আম্মু আব্বু শুনে অনেক খুশি হয়েছে, আর এমনিতেই অনেক দিন যাইনি। সকালে আম্মু কল দিয়ে তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। 

আমিঃ আম্মু আব্বুকে বলেছেনে? 

অবন্তীঃ হুম,,,

আমিঃ কি বলেছে? 

অবন্তীঃ যাওয়ার জন্য বলেছে। যদি তুমিও যাও তাহলে ভালো হতো। 

আমিঃ না আমি যেতে পারবো না। 

অবন্তীঃ কেন, গেলে সমস্যা কোথায়? 

আমিঃ কাজ আছে। কালকে এমনিতে অগ্রিম টাকা নিয়ে নিয়েছি। এখন কাজ না করলে বের করে দিবে। পরে দেখা যাবে চাকরিটাও যাবে। 

অবন্তীঃ তাহলে আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তারপর যেও, প্লিজ না করো না। একা একা ভয় করে। 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, রেড়ি হয়ে নেন। 

অবন্তীঃ ওয়েট, যাবো আর আসবো। 

আমি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম, অবন্তী রেড়ি হয়ে আব্বু আম্মুকে সালাম করে বেরিয়ে গেলো। 

একটা রিক্সা নিয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। কালকে যেই মিষ্টি গুলো আমি কিনে নিয়ে আনলাম সেগুলো আম্মু ওর সাথে দিয়ে দিয়েছে। যারে আর ওখানে যাওয়ার সময় কিছু কেনা না লাগে। 

কিছুক্ষণ পর অবন্তীদের বাসায় চলে আসলাম। ওর ব্যাগপত্র নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে যাবো এমন সময় অবন্তী ডাক দিলো..... 

অবন্তীঃ জুয়েল! 

আমিঃ হুম বলেন,,,

অবন্তীঃ কিছু খেয়ে যাও। 

আমিঃ এখন না, এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। আসি, আল্লাহ হাফেজ। 

অবন্তীঃ জুয়েল! 

আমিঃ আবার কি? 

অবন্তীঃ রাতে আসতে পারবে? 

আমিঃ রাতে এসে কি করবো? 

অবন্তীঃ আম্মু তোমাকে আসতে বলেছে। রাতে এসে দেখা করে নিও, রাত থেকে পরের দিন এখান থেকে কাজে যেও। 

আমিঃ চেষ্টা করবো। 

এ কথা বলে আবার রওনা দিলাম। মনে মনে ভাবলাম আজকে হঠ্যাৎ করে অবন্তী এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে! কারন কি? মনে হয় কাল রাতে সব কিছু শুনে ফেলেছে। 

ধুর এতো কিছু ভেবে লাভ নেই, ও আমাকে মেনে নিবে না। ভালো পাশ করার কারনে হয়তো কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছে। 

অবন্তীকে ওদের বাসায় রেখে আমি কাজে চলে গেলাম। সারা দিন কাজ করলাম এর মাঝে অবন্তী বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। খেয়েছি কিনা, ভালো আছি কিনা, ওদের বাসায় কখন যাবো আরো অনেক কিছু বলেছে। 

রাতে আমি আমাদের বাসায় চলে গেলাম। 

আম্মুঃ কিরে তুই এখানে কেন? 

আমিঃ মানে কি!

আম্মুঃ অবন্তী তোকে কিছু বলেনি? 

আমিঃ হুম বলেছে, ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য বলেছে। 

আম্মুঃ তো যাস নি কেন? 

আমিঃ আরে আজব তো, ও বললেই কি যেতে হবে? 

আম্মুঃ হুম অবশ্যই। অবন্তী অনেক বার কল দিয়েছিলো তুই আসলে যেন ওদের বাসায় যেতে বলি। 

আমিঃ আমি যাবো না এখন। অন্যদিন যাবো,,,, 

বাবাঃ যাবি না মানে? এক্ষুনি যা,,, 

আমিঃ কিন্তু বাবা! 

বাবাঃ কোনো কিন্তু নয়, রেড়ি হয়ে অবন্তীর কাছে যা। 

কি আর করা রেড়ি হয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। প্রায় ৩০ মিনিট পর ওদের বাসার সামনে গেলাম। 

কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো। কি ব্যাপার এটা কি হলো? মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে গেলো। মনে হয় দরজার কাছেই কেউ ছিলো। 

তাকিয়ে দেখি অবন্তী, আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললো... 

অবন্তীঃ এতো দেরি হলো যে? 

আমিঃ রাস্তায় জ্যাম ছিলো। 

অবন্তীঃ যাও সোফা রুমে যাও। আম্মু আব্বু ওখানে আছে। 

আমি ওই রুমে গেলাম, উনাদের সালাম করলাম, অনেকক্ষণ বসে বসে গল্প করলাম। তারপর একসাথে খেয়ে আমি অবন্তীর রুমে চলে গেলাম। 

রুমে গিয়ে খাটে শুয়ে রইলাম এমন সময় অবন্তী আসলো। আমি যেই উঠে যাবো, তখনই.....

অবন্তীঃ এই কই যাও?

আমিঃ আপনি ঘুমাবেন না? 

অবন্তীঃ হুম ঘুমাবো তো, কিন্তু তুমি খাট থেকে নামো কেন? 

আমিঃ না নামলে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?

অবন্তীঃ সেটা তোমার জানতে হবে না। তুমি ঘুমাও,, 

আমিঃ কিন্তু...

অবন্তীঃ ওই ঘুমাতে বলছিনা! ঘুমাও,,, 

আমি কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম, অবন্তী রুম থেকে চলে গেলো। মনে হয় অন্য রুমে থাকবে, যাক ভালোই হইছে। 

আমি অন্তত খাটে ঘুমাতে পারবো, এই ফ্লোরে থাকতে থাকতে পিটে ব্যথা হয়ে গেছে। 

আর শ্বশুর বাড়ি এসে যদি নিচে থাকি আর সেটা যদি কেউ দেখে তাহলে আমার মান ইজ্জত সব শেষ। 

শুয়ে শুয়ে ভাবছি অবন্তী কি আসলেই আমাকে মেনে নিবে না? আমারওতো ইচ্ছা করে বউয়ের সাথে থাকতে, ওর সাথে ভালো একটা সম্পর্ক রাখতে। মনের গহিনে যত কথা লুকিয়ে আছে সব গুলো শেয়ার করতে। 

কিন্তু এমন কপাল নিয়ে দুনিয়াতে আসছি যেই কপালে সুখ নামের কোনো কিছু লেখা নেই। 

ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম,,,,

রাতের বেলা মনে হলো কিছু একটা আমার মুখের উপর চাপ দিয়ে আছে, আস্তে আস্তে চোখ খুললাম তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশেই শুয়ে আছে আর একটা হাত আমার মুখের উপরে অন্য একটা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। 

আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, স্বপ্ন দেখতেছি নাতো? নাহ স্বপ্ন না আসলেই সত্যি। 

কিছুক্ষণ অবন্তীর মায়ামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, দেখে মনে হচ্ছে ছোট একটা বাচ্ছা আমার বুকে শুয়ে আছে। 

তারপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ওর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো,,,,

অবন্তীঃ কি ব্যাপার মহারাজ, আর কতো ঘুমাবেন। কাজে যাবেন না? 

আমিঃ ওহ সরি, আপনি আমাকে আরো একটু আগে ডেকে দিতেন। 

অবন্তীঃ সমস্যা নেই এখনো সময় বেশি হয়নি। আমি নাস্তা রেড়ি করতেছি তুমি ফ্রেশ হয়ে হয়ে ডাইনিং রুমে আসো। 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান, আমি আসছি। 

অবন্তী চলে গেলো, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম। এতো গুলো নাস্তা দেখে একটু টাসকি খেলাম। আসলে অনেক দিন হইছে এতো নাস্তা একসাথে খেয়েছি যে। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বাইরে গিয়ে কলা পাউরুটি খেয়ে নিতাম। 

যাইহোক সবাই মিলে নাস্তা করে নিলাম, নাস্তা করে ওর আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে আমি ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য কাজে যাবো 

গেইটের বাইরে আসতেই অবন্তী ডাকলো....

অবন্তীঃ জুয়েল! 

আমিঃ কিছু বলবেন? 

অবন্তীঃ কাজে না গেলে হয় না? 

আমিঃ আজকে বাজার করতে হবে, কাজে না গেলে কি দিয়ে বাজার করবো? 

অবন্তীঃ এখানে আবার আসবে?? 

আমিঃ জানি না, তবে মনে হয়না। 

অবন্তীঃ প্লিজ আসিও। 

আমিঃ চেষ্ঠা করবো। 

তারপর বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। 

সোজা কাজে চলে গেলাম, কাজ করতেছি এমন সময় লিমার কথা মনে পড়লো, সে তো বলেছে রেজাল্টের পর ওর বাবার অফিসে যেতে। রেজাল্ট তো দিলো, দেখি কিছু একটা হয় কিনা। সেখানে চাকরিটা হয়ে গেলে অন্তত আর ভ্যান গাড়ি নিয়ে হেটে হেটে মাল বিক্রি করা লাগবে না। 

লিমাকে কল দিলাম। কয়েকবার রিং পড়লো কিন্তু ধরলো না। আবার দিলাম, এবার ধরলো....

আমিঃ হ্যালো লিমা কেমন আছিস? 

লিমাঃ জুয়েল নাকিরে? 

আমিঃ হুম, ভুলে গেলি নাকি? 

লিমাঃ আরে হারামি তোরে কেন ভুলবো, বল কি অবস্থা? 

আমিঃ এইতো মোটামুটি। তোর কি অবস্থা? রেজাল্ট কি? 

লিমাঃ বলিস না ভাই যেটা আশা করেছিলাম সেটা হয়নি। তোর কি? 

আমিঃ কোনোমতে পাশ করছি। আচ্ছা একটা কথা ছিলো!

লিমাঃ হুম বল। 

আমিঃ তুই যে বলেছিলি তোদের অফিসে লোক লাগবে, সেই ব্যাপারে তুই কি তোর বাবার সাথে কথা বলেছিস? 

লিমাঃ কথা বলা লাগবে না, তুই তোর সব কাগজপত্র নিয়ে চলে আসিস, আমি থাকবো। ঠিকানা তোরে মেসেজ করে দিবো। 

আমিঃ থেংক্স দোস্ত। 

লিমাঃ থেংক্স দিয়ে কাজ হবে না। ট্রিট দিবি,, 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো। কাল কয়টায় আসবো?

লিমাঃ ১০ টায় আসিস। 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

কলটা কেটে দিলাম। মনের মধ্যে একটু শান্তি আসলো। 

বিকাল পর্যন্ত কাজ করে, বাজার করে বাসায় গেলাম। অবন্তী কয়েকবার কল দিয়েছিলো ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য, আমি না করে দিছি। 

খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে ঘুম থেকে দেরিতে উঠলাম কারন কাজে যাবো না। ৯ টার সময় রেড়ি হয়ে আব্বু আম্মুকে সালাম করে নিলাম। 

আম্মুঃ কিরে তোর আবার কি হইছে? 

আমিঃ কেন সালাম করতে পারি না? 

বাবাঃ আরে পারবিনা কেন, কিন্তু হঠ্যাৎ করে করতেছিস তো তাই জিজ্ঞেস করলো। 

আম্মুঃ কিছু কি হয়েছে? 

আমিঃ সেটা বিকালবেলা বলবো। 

বাবাঃ এখন বল। 

আমিঃ সারপ্রাইজ,,,

এ কথা বলে বাসা থেকে রওনা দিলাম। লিমার দেওয়া ঠিকানা মতো চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি লিমা বসে আছে। 

লিমাঃ কিরে আসছিস? 

আমিঃ হুম। 

লিমাঃ আয় বাবার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই। আর বাবাকে তোর ব্যাপারে সব বলেছি। 

আমিঃ থেংক্স দোস্ত। 

লিমাঃ যা ভিতরে যা, সব কিছু দিয়ে আয়। 

আমি ভিতরে গেলাম, সবার সাথে পরিচিত হয়ে কাগজপত্র সব জমা দিলাম। এরপর বাইরে এসে লিমার সাথে বসলাম। 

একটুপর ম্যানেজার এসে আমাকে আর লিমাকে ডেকে নিয়ে যায়। 

ভিতরে গেলাম,,, লিমার বাবা বললো....

আংকেলঃ দেখো বাবা তোমার SSC & HSC এর রেজাল্ট ভালো ছিলো কিন্তু অনার্সের রেজাল্ট খুব একটা ভালো না। আমাদের রুল অনুযায়ী চাকরিটা তুমি আসলে পাচ্ছো না। 

আমিঃ.......(চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম) 

আংকেলঃ কিন্তু আমার মেয়ে এতো করে বলছে যে চাকরিটা না দিয়ে পারছিনা। তুই চাইলে কালকে থেকে জয়েন করতে পারো।

আমিঃ ধন্যবাদ স্যার।

খুশিতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। আমি আর লিমা ওর বাবার রুম থেকে বের হলাম। 

আমিঃ লিমা কি বলে তোকে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না। 

লিমাঃ হুম, তোর বউ কেমন আছে? 

আমিঃ আছে ভালোই। 

লিমাঃ এখন কি ঠিক হইছে? 

আমিঃ আগে থেকে একটু ঠিক হইছে। বাকিটা আগের মতোই। 

লিমাঃ টেনশন করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে। 

আমিঃ হুম। চল এখন,,,, 

লিমাঃ কোথায়? 

আমিঃ ট্রিট নিবি না? 

লিমাঃ আজকে না, অন্যদিন।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে যাই। বসের সাথে কিছু হিসাব আছে ওগুলো শেষ করি আসি। 

লিমাঃ হুম যা, কালকে থেকে চলি আসিস। 

আমিঃ ওকে আল্লাহ হাফেজ,,, 

তারপর লিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওদের অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম,,,, 

আয়মান কল দিলো, ওর সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি এমন সময় কিছু একটা  সজোরে এসে আমাকে ধাক্কা দিলো। ধাক্কা খেয়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়ি। তারপর আর কিছুই মনে নেই। 

যখন জ্ঞান আসলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম, তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে আছে, আমি  ওর দিকে তাকালাম, আমার তাকানো দেখেই.... 

#চলবে.....

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url