টুয়েন্টি মিনিটস (চ্যাপ্টার-০১) - পর্ব ১১-১২-১৩ । Golpo Porun

টুয়েন্টি মিনিটস (চ্যাপ্টার-০১)

(By - ShoheL Rana)

টুয়েন্টি মিনিটস - golpo porun
This photo is from Adobe Stock

পর্ব - ১১

রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে রিহান তার ব্যাগটা গুছিয়ে বের হয়ে পড়ে জাকারিয়া সাহেবের বাড়ি থেকে। নিজের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা হয়ে গেছে তার৷ কতটা নির্মম হলে এরা একজনের জায়গায় আরেকজনকে বলি দিতে দ্বিধাবোধ করে না! সে এমনিতেই একটা বিপদ থেকে বের হতে পারছে না, এখন যদি ব্রিটিশদের হাতে গিয়ে পড়ে, তবে আরেক বিপদ। সে ইতোমধ্যে বুঝেছে, কোনো দুর্ঘটনা হলেও তার সময়ে ফিরতে পারবে না। যদি ভাগ্য চায়, তবেই ফিরতে পারবে, যেভাবে ভাগ্য তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। 

       নিস্তব্ধ রাস্তায় কোনো পরিবহন চলছিল না সেই সময়। গ্রাম এলাকার মানুষ একটু রাত হতেই ঘুমিয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে রিহান হেঁটেই জাফর মাস্টারদের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। দুর্বল শরীর নিয়ে হাঁটতে তার কষ্ট হচ্ছে। অনেকটা হাঁটার পর সে হঠাৎ একটা গাড়ির শব্দ পেলো। একটা প্রাইভেট কার ছুটে আসছে। রিহান রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিফট চাইলো। থামলো গাড়িটা।

টুয়েন্টি মিনিটস - সকল পর্ব

      'কী চায়?' ড্রাইভিং সিট থেকে একজন প্রশ্ন করলো।

      'একটু লিফট পাবো, স্যার? একটু চর-আলগীতে নামিয়ে দেবেন?'

      'চর-আলগী এটা কোথায়?'

      'ঐ  তো সামনে, কয়েক কি.মি দূরে।' 

       'দুঃখিত, লিফট দেয়া যাবে না।'

       তখন পেছনের সিট থেকে একজন বললেন, 'তুলে নাও ওকে, সামনে নামিয়ে দিয়ো।'

       'কিন্তু স্যার, লোকটাকে দেখুন, কেমন অদ্ভুত লাগছে। গাড়িতে তুললে কোনো বিপদ হবে না তো? তাছাড়া আমরা এভাবে বের হয়েছি কেউ জানে না।'

       'সমস্যা নেই, তুলে নাও। লোকটার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বিপদে পড়েছে। গাড়িতে তোলার আগে ব্যাগটা চেক করে নাও।'

      'ঠিক আছে স্যার।' 

      কথা-বার্তায় বোঝা গেল পেছনের লোকটা কোনো ভিআইপি। লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে বাইরে। হয়তো কোনো প্রয়োজনে বা কাজের ফাঁকে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে। লোকটার চেহারা দেখা গেল না। ধুলাবালি থেকে রক্ষার্থে মুখে মাস্ক পরে আছেন তিনি। রিহান ব্যাগটা এগিয়ে দিলো ড্রাইভারের দিকে। ড্রাইভার ব্যাগ চেক করতে করতে বললো, 'স্যার, সন্দেহজনক কিছু নেই। কিছু কাপড়চোপড়,  একটা ডায়েরি, আর কী একটা যন্ত্র আছে।'

      'কী যন্ত্র?' প্রশ্ন করলেন পেছনের লোকটা।

      'মোবাইল স্যার, মোবাইল। এটা দিয়ে কথা বলা হয়।' জানালো রিহান। 

      'ঠিক আছে, ওর জিনিস ওর ব্যাগে রেখে দাও। ওকে গাড়িতে তুলে নাও।' নির্দেশ দিলেন পেছনের লোকটা। মোবাইল জিনিসটা কী, এটা দিয়ে কীভাবে কথা বলা হয়, এসব ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেন না। কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত মনে হচ্ছে তাঁকে। রিহান ড্রাইভারের পাশে উঠে বসলে, গাড়ি ছেড়ে দেয়া হলো। নির্জন রাস্তা পেয়ে ছুটতে লাগলো গাড়ি। হঠাৎ পেছন থেকে বলে উঠলো, 'গাড়ি থামাও। সামনের বাঁ পাশের চাকাটা থেকে বাতাস বের হচ্ছে। চাকাটা চেঞ্জ করো।'

     আশ্চর্য হয়ে গেল রিহান। গাড়ি তো ঠিকই আছে। সুন্দর গতিতে ছুটছে। বাতাস বের হবে কেন? কোনো শব্দও তো হচ্ছে না। 

     গাড়ি থামালো ড্রাইভার। গাড়ি থেকে নেমে চেক করলো সে। তারপর বললো, 'জি স্যার, চাকাটা থেকে বাতাস যাচ্ছে। এখনই চেঞ্জ করে দিচ্ছি।'

     ড্রাইভারের কথা শুনে চমকে তাকালো রিহান পেছনের লোকটার দিকে। 'স্যার, আপনি কী করে জানলেন একটা চাকা থেকে বাতাস বের হচ্ছে? আর ঐটা যে সামনের বাঁ পাশের চাকা, এটাই বা কী করে বুঝলেন?'

      'নাম কী তোমার?' পেছনের লোকটা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলেন। রিহান নিজের নাম বললে উনি পুনরায় বললেন, 'জীবনে চলতে গেলে চারপাশটা অবজারভেশনে রাখবা। বুঝলে তো যুবক?'

      'তা রাখবো। কিন্তু স্যার, কতটা অবজারভেশন করলে না দেখেই, না শুনেই বলে দেয়া যায় ঠিক ঐ চাকা থেকেই বাতাস বের হচ্ছে?'

     'শুনো রিহান, তুমি গাড়িতে উঠার পর সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট ব্যালেন্স ছিল। তোমার আর আমার ড্রাইভারের একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তুমি এক ইঞ্চি বাঁ দিকে কাত হয়ে গেছো। আর আমি হালকা সামনে ঝুঁকে গেছি। পুনরায় আমরা আগের ব্যালেন্সে আসলে সব ঠিকই থাকতো, কিন্তু আগের ব্যালেন্সে ফিরিনি আমরা, তাই সহজেই বুঝলাম বাঁ পাশের চাকাটা থেকে বাতাস বের হচ্ছে।

      'কিন্তু, কীভাবে এতটা নিখুঁতভাবে বললেন স্যার? আমি বা আপনার ড্রাইভার কেউ তো টেরই পাইনি।'

      'ঐ যে বললাম, অবজারভেশন?'

      রিহান এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। একটা লোক এতটা মেধাবী কী করে হতে পারে? রিহান তার পুরো জীবনে হয়তো এতটা মেধাবী লোক দেখেনি। 

     চাকা বদলিয়ে পুনরায় উঠে বসলো ড্রাইভার। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে রিহানের উদ্দেশ্যে বললো, 'পেছনে যিনি বসে আছেন, তাঁকে চিনছেন তো?'

     'না, কে উনি?' অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রিহান। 

      'উনার সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই, তাই এতটা অবাক হচ্ছেন। উনি খুবই দূরদর্শী এক লোক। উনার পরিচয়টা না হয় অজানাই থাকুক।'

      রিহানের মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল। এমন এক মেধাবী লোকের সাথে তার দেখা হলো অতীতে এসে, আর সে তাঁর পরিচয়টা জানবে না?'

      'কোথায় নামবে তুমি?' পেছন থেকে প্রশ্ন এলো।

      'আরেকটু সামনে স্যার।' জবাব দিলো রিহান।

      'নিজ বাড়ি নিশ্চয়ই এখানে নয়। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, একটু দ্বিধায় আছো।'

      'জি স্যার। আপনি তো মেধাবী লোক। আপনাকেই বলি আমার কথাটা। কেউ তো বিশ্বাস করে না আমাকে।'

      'বলো শুনি।'

      'আমি আপনাদের এই সময়ের কেউ না। ভবিষ্যত থেকে এসেছি।'

      চমকে উঠে ব্রেক কষলো ড্রাইভার। কিন্তু, এতটাও চমকালেন না পেছনের লোকটা। তিনি ড্রাইভারকে ঠিকভাবে গাড়ি চালাতে বলে রিহানকে শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, 'ভবিষ্যত থেকে এসেছো? কোন সাল থেকে?'

      '২০১৭ সাল স্যার।'

      'আচ্ছা, তুমি জানো বাংলার প্রধানমন্ত্রী কে এই সময়ে?'

     'মানে আপনাদের এই ১৯৪২ সালে?'

     'হ্যাঁ। 

      রিহান ইতিহাসের ছাত্র ছিল। তাই একটু কী যেন ভেবেই বললো, 'বাংলার প্রধানমন্ত্রী এখন শের-এ বাংলা এ কে ফজলুল হক নিশ্চয়ই। আরও এক বছর তিনি বাংলার প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।' 

      'আর এক বছর পর কে হবেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী?' 

      'খাঁজা নাজিমুদ্দীন।'

      রিহানের কথাগুলো লোকটা বিশ্বাস করলো কি-না বোঝা গেল না। হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না তিনি। একটু পর গাড়ি থেকে নেমে গেল রিহান। তাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি যখন চলে যাচ্ছিল, তখন পেছনের লোকটা মুখ বের করে মাস্কটা নামিয়ে বললেন, 'ভালো থেকো যুবক।'

ফেসবুক গ্রুপ ভিজিট করুন

     চেহারাটা চিনতে পারলো রিহান। এই চেহারাটা অনেকবার বইয়ের পাতায় দেখেছে সে। যিনি 'বাংলার বাঘ' নামে পরিচিত। স্বয়ং শের-এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের সাথে একই গাড়িতে চড়ে এসেছে রিহান! বিশ্বাস করতে পারছে না সে। উনার মেধার পরিচয় সে বইয়ে পড়েছে, আজ যেন স্বচক্ষে দেখলো।

     'স্যার স্যার' বলে ডাক দিলো রিহান কয়েকবার। গাড়িটা ক্রমশ দূরে সরতে লাগলো। 

      জাফর মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে দরজায় টোকা দিলে ঘুম-ঘুম ভাব নিয়ে দরজা খুললেন মাস্টার সাহেব। রিহানকে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, 'এ কী! রিহান তুমি এত রাতে?'

     রিহান সব খুলে বললো মাস্টার সাহেবকে। শুনে উনি বললেন, 'ঠিক আছে, ভেতরে এসো। কিছু খেয়েছো?'

      'হ্যাঁ, খেয়েছি।' 

      'এখন তবে ঘুমাও। সকালে কথা হবে।'

       সকালে রিহানের ঘুম ভাঙলো পানির স্পর্শ পেয়ে। সুফিয়া এসে মুখের উপর পানির ছিটকা দিয়ে বললো, 'এই যে, ওঠুন।'

      চোখ খুলে রিহান আড়মোড়া ভাঙলো। রাতে সুফিয়ার সাথে দেখা হয়নি তার। তখন সে ঘুমিয়ে ছিল। এখন তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, 'কেমন আছেন?'

       'ভালো আছি। চোরের মতো আমাদের বাসায় কে প্রবেশ করতে বলেছে?'

       'চোরের মতো না তো। আংকেল দরজা খুলে দিয়েছিল।'

       'আমি তো দেখিনি। তাই চোরের মতোই ঢুকেছেন। যাইহোক, ওঠুন। খাবার খাবেন। ইশ! আপনার কপালটা তো অনেকটা কেটে গেছে।'

       'ঐ যে, ঐদিন বিমানের অংশ পড়েছিল...'

       'শুনেছি বাবার কাছে। এর বিচার পরে হবে। এখন ওঠুন তো...'

       'বিচার? কীসের বিচার?'

      জবাব না দিয়ে বের হয়ে গেল সুফিয়া। 

       অবশ্য পরে এটা নিয়ে আর কথা বলেনি সুফিয়া। সুযোগই পাইনি সে। সারাদিন ব্যস্ত ছিল। পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল তাকে সেদিন। সারা ঘরে মেহমানে ভরে গিয়েছিল। আশেপাশের বাড়িঘর থেকে কয়েকটা ভাবি এসে সুন্দর করে সাজিয়েছিল সুফিয়াকে। তখন তাকে এত বেশি সুন্দর লেগেছিল, পাত্রপক্ষ আর অপছন্দ করতে পারেনি। অবশ্য আগে থেকে ওরা পছন্দ করেই এসেছে। পাত্রের বাবা জাফর মাস্টারকে বাজারে পেয়ে সুফিয়াকে নিজের ছেলের বউ করার প্রস্তাব করে। এর আগেও অনেকবার একই প্রস্তাব করেছে। মাস্টার সাহেব অনেকবার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও এবার আর না করেননি। বয়স তো কম হয়নি সুফিয়ার। বারো-তেরো বছর বয়সী মেয়েদের  বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, সেখানে সুফিয়ার বয়স এখন আঠারো প্রায়। সুফিয়ার বিয়ে হয়ে গেলে জাফর মাস্টার একা হয়ে পড়বেন, তাই এতদিন বিয়ে দেননি। তবে এখন আর নিজের কথা ভাবেননি উনি। মেয়ের কথা ভেবেছেন। হঠাৎ উনার কিছু হয়ে গেলে সুফিয়ার কী হবে? তাই এবার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন।

     পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর, বিকেলে একটু অবসর পায় সুফিয়া। তখন সে ক্লান্ত ছিল। কারও সাথে কথা না বলে নিজ কক্ষে গিয়ে শুয়ে পড়ে। জাফর মাস্টার একবার গিয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করেন, 'পাত্র পছন্দ হয়ছে মা, তোর?'

      সুফিয়া শুধু উত্তর দেয়, 'হ্যাঁ বাবা।'

      জাফর মাস্টারের পাশেই ছিল তখন রিহান। সুফিয়ার মুখে 'হ্যাঁ' শব্দটা শুনে, কেমন যেন খুশি হতে পারলো না সে। বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো। তবে কি সে ভালোবেসে ফেলেছে সুফিয়াকে? নাহ্, সেটা অসম্ভব। দুজন তারা ভিন্ন ভিন্ন সময়ের মানুষ।

     সুফিয়ার সাথে রিহানের আবার কথা হয় পরদিন সকালে। হকার থেকে পত্রিকা নিয়ে এসে রিহান সুফিয়ার হাতে দেয়। সুফিয়া তা ফেরত দিয়ে বলে, 'বাবাকে দিয়ে আসুন।'

      'আংকেল তো গাছে পানি দিচ্ছেন...'

      'এসে তারপর পড়বে। ওখানে রাখুন, টেবিলে।'

      'আপনার কি মন খারাপ?'

      'না, মন খারাপ হবে কেন?' কৃত্রিম হাসলো সুফিয়া।

     'আমার বিচার করবেন না? কী যেন বিচারের কথা বলছিলেন সেই সময়'

      'থাক ঐ বিচার। আপনি একটু সাবধানে থাকবেন। ওভাবে খামখেয়ালি আর হবেন না। আমার বিয়ে হয়ে গেলে বাবাকে একটু দেখে রাখবেন। কী সৌভাগ্য তাই না? আমারও বিয়ে হবে, আপনিও এলেন। বাবা একজন সঙ্গী পাবে আমি না থাকলে।' দূরে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সুফিয়া।

চলবে....

পর্ব - ১২

মসজিদ থেকে আসরের নামাজ পড়ে বের হলেন জাফর মাস্টার। কয়েকজন বৃদ্ধ লোক এলেন তাঁর সাথে কথা বলতে। ওঁদের সাথে মসজিদের ইমামও ছিলেন। তিনি জাফর মাস্টারের উদ্দেশ্যে বললেন, 'মাস্টার সাহেব, আপনার সাথে কিছু কথা আছে।'

     'কী বিষয়ে হুজুর? বলুন?' 

     'চলুন, যেতে যেতে কথা বলি।'

      একসাথে হাঁটতে লাগলো ওঁরা। ইমাম সাহেব শুরু করলেন, 'দেখুন মাস্টার সাহেব, আপনি এলাকার শিক্ষিত একজন ব্যক্তি। নিয়মিত নামাজও পড়েন। কিন্তু, আপনি যে কাজটা করছেন, তা তো আমাদের শরীয়ত বিরোধী।'

      'কী করলাম আমি?' অবাক হলেন জাফর মাস্টার। 

     'আপনার তো বিয়ের উপযুক্ত একটা মেয়ে আছে। আপনি কী করে একটা বেগানা পুরুষকে দিনের পর দিন আপনার বাড়িতে ঠাঁই দিচ্ছেন?'

     হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নে জাফর মাস্টার একটু বিভ্রান্ত হলেন। বললেন, 'ছেলেটা একদম একা। ওর বাড়িঘর নেই। আর ছেলেটা মানসিক বিকারগ্রস্ত। তাকে কি সাহায্যটুকু করে আমি ভুল করেছি?'

      'কিন্তু আমাদের শরীয়তটুকুও তো মানতে হবে, তাই না?'

      'আমার মেয়ের কয়েকদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে। তারপর তো কোনো সমস্যা থাকবে না...'

      তখন একজন বৃদ্ধ লোক বলে উঠলেন, 'জাফর, শুনেছি ওরা তোমার মেয়েকে বউ হিসেবে নেবে না।'

     'মানে? কী বলছেন শমসের চাচা? আমার মেয়েকে বউ হিসেবে নেবে না, কেমনে জানলেন আপনি?'

     'মোড়ল পাড়ার শুক্কুরের ছেলের জন্য তোমার মেয়েকে দেখতে এসেছিল না?'

     'হ্যাঁ।'

      'পাত্রী তো দেখে গেছে অনেকদিন হলো। এখনও তাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাইছো?'

      'না।' অস্ফুটে শব্দ করলেন জাফর মাস্টার। আসলেই শুক্কুরের বাড়ি থেকে বিয়ের কাজটা আগানোর মতো কোনো ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। অথচ ওরা পাত্রী দেখে গেছে বেশ কয়দিন হয়ে গেছে। 

      'তোমার বাসায় ঐ ছেলেটা থাকে। তোমার মেয়ে ছেলেটার সাথে কথা বলে, সময় কাটায়, এইজন্যই বিয়েতে ওদের মত পালটে যায়।' বৃদ্ধটা জানালেন।

      আরেক বৃদ্ধ তখন বললেন, 'এখন আর মনে হয় না, তোমার মেয়েকে কেউ বউ করবে। এক কাজ করো জাফর, তুমি ছেলেটার সাথেই তোমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও।'

       জাফর মাস্টার কোনো জবাব না দিয়ে নিজ পথে চলে এলেন। পরবর্তীতে বিষয়টা নিয়ে শুক্কুরের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলো, ওরা আসলেই তাঁর মেয়েকে বউ করবে না। জাফর মাস্টারও আর কথা বাড়ালেন না। তবে মেয়ের বিয়ে নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। নিজেই অনেক জায়গায় সম্বন্ধ ঠিক করতে চেয়েছিলেন, সবাই একই কারণে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে চিন্তা করতে করতে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তবুও ছাড় পেলেন না গ্রামবাসীর কাছে। একদিন মসজিদের ইমাম তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। তারপর সরাসরি বলে দেন, হয় ছেলেটাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে, আর নয়তো ওদের দুজনকে বিয়ে দিতে হবে। সেদিন জাফর মাস্টার সবাইকে যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশ্বস্ত করলেও আরও কিছুদিন কেটে যায় এভাবে।

       গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। সেদিকে খেয়াল নেই সুফিয়ার। মন খারাপ করে পুকুর-ঘাটে বসে আছে সে। বাবার কথা ভাবছে। বাবা দিনদিন শয্যাশায়ী হয়ে পড়ছে। ছোটোকাল থেকেই দেখেছে সে, অনেক কষ্টে বাবা তাকে বড়ো করেছে। মায়ের অভাব কখনও বুঝতে দেয়নি। সেই বাবা আজ তার-ই বিয়ের কথা চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সকালে একবার ডাক্তার এসে দেখে গেছেন বাবাকে। কিছু ওষুধ দিয়ে টেনশন করতে নিষেধ করে গেছেন ডাক্তার। কিন্তু, টেনশন কি আর কমে? মেয়ের একটা গতি করে তিনি একটু শান্তিতে মরতে চান। ওদিকে রিহানকেও বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলতে পারছেন না। কোন মুখে বলবেন তিনি, 'রিহান তুমি চলে যাও।'

       আকাশে দুটো যুদ্ধ-বিমান আজকেও তাড়া করছে একটা অন্যটাকে। পেছনের বিমান থেকে গোলা ছোড়া হচ্ছে, সামনের বিমান থেকেও সমানে আক্রমণ চলছে। সেই গর্জনে যখন গ্রামবাসীও চিৎকার করতে করতে যার-যার মতো নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল, সুফিয়া তখনও বসেছিল পুকুর-ঘাটে। রিহান এসে ডাকলো তাকে, 'সুফিয়া...'

      'হুমম... কিছু বলবেন?' মাথা তুলে তাকালো সুফিয়া রিহানের দিকে। 

     'সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে, আপনি এখনও এখানে বসে আছেন যে? মন খারাপ?

     'না। একটু খারাপ লাগছে বাবার জন্য।'

      'আংকেল সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনি চিন্তা করবেন না। চিন্তা করতে করতে আপনিও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আমি ঠিক করছি, চলে যাবো এখান থেকে। আমার কারণেই এতকিছু হয়ছে।'

     'কোথায় যাবেন আপনি? আপনাকে কোথাও যেতে বলেছি? নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেন কেন?' ধমক দিলো সুফিয়া। রিহান চুপ হয়ে গেল। খানিক পর সুফিয়া নরম কণ্ঠে বললো, 'মেয়েদের গায়ে যে কলংক একবার লাগে, তা কি কখনও মুছে?'

    হঠাৎ বিকট শব্দ হলো আকাশে। সামনের বিমানটাতে আগুন লেগে গেছে। বিমানটা আগুনে দাউদাউ করে জ্বলতে জ্বলতে নিচে পড়তে লাগলো। অন্য বিমানটা শত্রুর শেষ দেখে চলে গেল নিজ পথে। বিকট শব্দ শুনেই রিহান আর সুফিয়ার দৃষ্টি যায় ওদিকে। তারপর উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করলো সুফিয়া, 'আহহ, আগুন ধরে গেল বিমানে। ও আল্লাহ। কী হলো এটা?'

     পাশের একটা গ্রামে পড়েছে বিমানটা। নিধিয়ার চরে। আবারও বিকট একটা শব্দ হলো। সুফিয়া উঠে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বললো, 'চলুন চলুন, দেখে আসি। আল্লাহ জানেন, ভেতরে কতজন লোক ছিল।'

     রিহানকে সাথে নিয়ে দৌড় দিলো সুফিয়া। গ্রামবাসীও যারা নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিল সবাই বের হয়ে ছুটতে লাগলো বিমানটা দেখতে৷ পুরো গ্রামে একটা রব পড়ে গেছে ইতোমধ্যে। বৃষ্টিও বেড়ে গেল খানিকটা। সেদিকে নজর নেই কারও। সবাই ভিজতে ভিজতেই ছুটছে। যাদের তাড়া একটু কম তারা ছাতা নিয়েই যাচ্ছে। রিহান আর সুফিয়া যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছলো, তখন আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ যেন এসে পড়েছে ওখানে। বিমানটা তখনও জ্বলে যাচ্ছে। ভেতরে বোমা-বারুদ থাকতে পারে এই ভয়ে কেউ ওটার কাছাকাছি যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ পর এলো প্রশাসনের লোক। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এলেন। তিনি পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেললেন ঘটনাস্থল। তারপর আগুন নেভাতে চেষ্টা করেও তিন ঘন্টা লেগে গেল সফল হতে। এরইমধ্যে সব যেন পুড়ে ভস্ম হয়ে গেল। ধাতব কিছু জিনিস উদ্ধার করতে পারলেও, লাশগুলো যেন আর লাশ নেই। ছাই হয়ে গেছে, চেনার উপায় নেই একটা লাশও। ঘটনাটা কেমন যেন পরিচিত মনে হলো রিহানের। কোথায় যেন সে একবার এরকম একটা ঘটনা পড়েছে। তবে মনে করতে পারছে না। পাশে সুফিয়া ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে কেঁপে কেঁপে ওঠছে সে। তাকে জিজ্ঞেস করলো, 'সুফিয়া, এই এলাকাটার নাম কী?'

      'নিধিয়ার চর।' জবাব দিলো সুফিয়া।

      'নিধিয়ার চর।' বিড়বিড় করলো রিহান। নামটা আগেও শুনেছে সে। হ্যাঁ, এই জায়গায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটা যুদ্ধরত বিমান পড়ে, এরকম একটা আর্টিকেল সে পড়েছিল একবার। আর ঐ বিমানে যিনি পাইলট ছিলেন, তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান এক ক্রিকেটার। নামটা মনে পড়তেই চমকে উঠে সুফিয়ার দিকে তাকালো রিহান। সুফিয়ার একটা হাত ধরে ডাকলো সে, 'সুফিয়া...'

     'সুফিয়া মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কী?'

      রিহান ভাবলো কথাটা সুফিয়াকে বলবে কি-না। তারপর জিজ্ঞেস করলো, 'আপনি কি জানেন ঐ লাশগুলোর মধ্যে কার লাশ আছে?'

      'আমি কী করে জানবো?'

      'আমি জানি।'

      'কার লাশ?'

      'রস গ্রেগরি। আপনার পছন্দের ক্রিকেটার। উনিই ছিলেন এই বিমানের পাইলট।'

      'হোয়াট?' রেগে গেল সুফিয়া। তারপর রিহানের হাতটা ঝাড়া দিয়ে দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগলো বাড়ির দিকে। বৃষ্টি থেমে গেছে ততক্ষণে। 

     জাফর মাস্টার ঘরেই ছিলেন। বাইরের বিকট শব্দ, গ্রামবাসীদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তিনি আন্দাজ করেছেন অদূরে কোথাও বিমান পড়েছে। মেয়েকে ঘরে ঢুকতে দেখে তিনি এই ব্যাপারে জানতে চাইলে, সুফিয়া ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, 'আমাকে কেন জিঞ্জেস করছো? বাসায় একটা ভবিষ্যতের লোক রেখেছো, তাকেই জিজ্ঞেস করো। সে তোমাকে কী হয়েছে বলার পর ভবিষ্যতের কথাও বলে দেবে।' হন-হন করে ভেতরের কক্ষে চলে গেল সুফিয়া। রিহান এলো কয়েক মুহূর্ত পর। মাস্টার সাহেব এবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'কী হলো রে রিহান? সুফিয়া এভাবে রেগে গেল কেন?' 

      'আংকেল, যুদ্ধ-রত দুটো বিমান থেকে একটা বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। আগুনে পুড়ে লাশগুলো চেনার উপায় না থাকলেও আমি জানি ওখানে একটা লাশ রস গ্রেগরির। বিমানটার পাইলট তিনি। এই কথা সুফিয়াকে বলায় সে রেগে গেছে।'

      'তুমি কী করে জানো ওখানে রস গ্রেগরির লাশ আছে?'

     'আংকেল, আপনি তো জানেন আমি ভবি...'

     কথাটা শেষ করতে না দিয়ে জাফর মাস্টার বললেন, 'আমাদের আজকের এই পরিণতি তোমার জন্য। তুমি না থাকলে এতদিনে আমার মেয়েটার বিয়ে হয়ে যেতো। আমারও আজ এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে হতো না। আর কত কষ্ট দেবে আমার মেয়েটাকে?'

      'দুঃখিত আংকেল।' মাথা নিচু করে ফেললো রিহান।

      'তোমাকে একটা কথা বলবো, সিরিয়াসলি নেবে।' জাফর মাস্টার প্রসঙ্গ পালটালেন।

      'কী কথা আংকেল?' আগ্রহ দেখালো রিহান।

      'আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সুফিয়াকে তোমার সাথেই বিয়ে দেবো।'

      চমকে ওঠলো রিহান। না, না, এ সম্ভব নয়। বিয়ের পর যদি কখনও রিহান তার সময়ে ফিরে যায়, তবে খুব কষ্ট পাবে সুফিয়া। সুফিয়াকে সে আসলেই ভালোবাসে। কিন্তু, সুফিয়ার কষ্ট সে দেখতে পারবে না। তাই জাফর মাস্টারের সিদ্ধান্তে অমত জানালো সে, 'দুঃখিত আংকেল, আমি বিয়ে করতে পারবো না সুফিয়াকে।'

     ভেতর থেকে সুফিয়া অগ্নিমূর্তি হয়ে এসে বললো, 'বাবা, আমাকে উনার বিয়ে করতে হবে না। আমাকে নিয়ে কারও চিন্তা করতে হবে না। তুমি সুস্থ হয়ে যাও বাবা। যতদিন তুমি আছো, ততদিন আমার পাশে কাউকে লাগবে না। এরপর না হয় একা বাঁচতে শিখবো।' শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে কণ্ঠটা নরম হয়ে এলো তার।

    পরস্পরের দিকে তাকালো রিহান আর সুফিয়া। তারপর পুনরায় ভেতরে চলে গেল সুফিয়া। 

    রাতে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো রিহান। এ বাড়িতে থেকে সে একটা সুখি পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। আর না। অনেক হয়েছে। এবার অন্তত একটু সুখে থাকুক ওরা। চলে যাওয়ার আগে রিহান বিদায় নিতে এলো জাফর মাস্টারের কাছে। মাস্টার সাহেবের বিছানার পাশে এসে শান্ত কণ্ঠে বললো, 'আংকেল, আমি চলে যাচ্ছি।'

      জাফর মাস্টার রিহানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেন। কিছুই বললেন না। রিহান পাশে বসে উনার হাত ধরে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, 'আমার মন-হৃদয় সবকিছু সুফিয়াকে নিজের করে পেতে চায়, কিন্তু মন যা চায় সবসময় তা পেতে নেই আংকেল। কিছু কিছু সময় মনের বিপরীতে চলতে হয় ভালো কিছু  ঘটার জন্য। আপনারা কেউ তো আমায় বিশ্বাস করেন না। তবে এটাই সত্যি যে, আমি ভবিষ্যত থেকে এসেছি। আমি যে ভবিষ্যত থেকে এসেছি এটার প্রমাণ খুব শীঘ্রি পাবেন। আর একমাস পর একটা ঘটনা ঘটবে। সেটা আমি আপনাকেই বলছি শুধু, সুফিয়ার কষ্ট বেড়ে যাবে, তাই ওকে কখনও বলিনি।' জাফর মাস্টারের হাত আরেকটু শক্ত করে ধরলো রিহান। মাস্টার সাহেব তার দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। রিহানের বাকি কথাটা শোনার জন্য আগ্রহ দেখালেন। 

     রিহান কিছুটা দম নিয়ে বললো, 'আজ থেকে একমাস পর কাজি নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হবেন, বাকশক্তি হারিয়ে ফেলবেন তিনি। লেখালিখি থেমে যাবে তাঁর চিরতরে।' 

     জাফর মাস্টার দরজার দিকে চোখ বুলালেন। সুফিয়া কোথাও আছে কি-না দেখে নিলেন। রিহান এই মুহূর্তে যে কথাটা বলেছে, শুনলে মেয়েটা একেবারে ভেঙে পড়বে। তাই তিনি রিহানকে অনুরোধ করলেন সুফিয়ার কানে যেন কথাটা না পৌঁছে। রিহান উনাকে আশ্বস্ত করে বললো, 'সুফিয়া জানবে না। শুধু আপনাকে বললাম। আমি চাই, আপনিই আমাকে আগে বিশ্বাস করুন যে, আমি ভবিষ্যতের কেউ। একমাস পর আমি এসে হয়তো দেখবো আমাকে নিয়ে আপনার ধারণা পালটে গেছে। শুধু একটাই আফসোস, এই একমাস আমার থাকার কোনো জায়গা রবে না, আমার সাথে চলার মতো আপনার যুগের কোনো টাকা রবে না। কয়েকটা দিন হয়তো উপোস হয়ে কাটাতে হবে।'

     জাফর মাস্টার রিহানের হাতে কিছু টাকা দিতে চাইলে, রিহান ফিরিয়ে দিয়ে বলে, 'অনেক ঋণী হয়েছি আপনাদের কাছে। আর ঋণী হতে চাচ্ছি না আংকেল।'

    উঠে দাঁড়ালো রিহান। ভেতরের কক্ষ থেকে সুফিয়া এসে দাঁড়ালো। অসহায়ভাবে তাকালো সে রিহানের দিকে। রিহান অস্ফুটে শব্দ করলো, 'আসি...'

      বেরিয়ে গেল রিহান। ভেজা মাটিতে পা ফেলে হাঁটতে লাগলো সে। আকাশে চাঁদ ছিল। তবে মেঘে ঢাকা চাঁদটা রাতের আঁধারটাকে খুব বেশি কাটাতে পারেনি। টিনের গেইটটা পার হয়ে ইটের কাচা সড়ক দিয়ে হাঁটতে লাগলো রিহান। ঘর থেকে পিছুপিছু দৌড়ে এসেছিল সুফিয়া। গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে সে রিহানের প্রস্থান দেখতে লাগলো। তারপর 'হু হু' করে কেঁদে উঠলো হঠাৎ। 

চলবে...

পর্ব - ১৩

ঘরের বাজারগুলো আজকাল সুফিয়া নিজেই করে। বাবা পুরোপুরি শয্যাশায়ী এখন। বাজার করার মতো আর কেউ নেই। বাধ্য হয়ে সুফিয়াকেই বাজারে যেতে হয়। এজন্য লোকের কত কথা শুনতে হয় তাকে! এই তো সেদিন বাজার করে ফেরার সময় এক বখাটের পাল্লায় পড়ে। তিনটা বিয়ে করেছে, তবুও মেয়েদের পেছনে ঘুরে লোকটা। মদ খেয়ে মাতাল হয়। সুফিয়াকে দেখে সেদিন পথ আটকালো। সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বললো, 'সুফিয়া, তোমার দুঃখটা আমি বুঝি। বিয়ে তো তোমার হচ্ছে না, আমিও আরেকটা বউ খুঁজছি।'

      সুফিয়া রেগে গিয়ে বললো, 'করিম ভাই, পথ ছাড়ুন।'

     করিম পথ ছাড়লো না। আরেকটু গা ঘেঁষে বললো, 'তোমার বাপের অসুখটার কথা ভাবো। তোমার বিয়ে হয়ে গেলে সেও সুস্থ হবে।' বলেই সুফিয়ার হাত ধরতে চাইলো করিম। সুফিয়া তার বিশেষ জায়গায় জোরে পা চালিয়ে দ্রুত হেঁটে চলে এলো। করিমের আর্তনাদ কানে এলেও পেছনে সে আর তাকায়নি।

    এভাবেই প্রতিনিয়ত সুফিয়াকে এসবের শিকার হতে হয়। আজও বাজার করে যখন ফিরছিল, কয়েকটা ছেলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো। একটা ছেলে মন্তব্য করলো, 'পুরুষ হয়ে জন্ম নিতে গিয়ে মেয়ে হেয়ে গিয়েছিল সে।' 

    ছেলেটার মন্তব্য শুনে বাকিরা হেসে ওঠলো। আরেকটা ছেলে বলে উঠলো, 'বেচারির বিয়ের চিন্তায় বাপটা মরতে বসলো। আমাদের মধ্যে কাউকে পছন্দ হলে বিয়ে করে নিতে পারে।'

     সুফিয়া বরাবরই প্রতিবাদী মেয়ে। এসব শ্লেষোক্তি সে সহজে হজম করলো না। বাজারের ব্যাগটা রেখে পায়ের জুতো খুলে তেড়ে গেলে, ছেলেগুলো পালিয়ে যায়। সুফিয়া উত্তেজিত হয়ে ফিরে আসে ঘরে৷ জাফর মাস্টার নিজের বিছানায় শুয়ে ছিলেন। মেয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকলেন। সুফিয়া এসে একটু রুক্ষ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, 'কী হয়েছে? ডাকছো কেন?'

     'আজও তোকে উত্ত্যক্ত করেছে তাই না?'

     সুফিয়া জবাব দেয় না। তবে জাফর মাস্টার ঠিকই বুঝে ফেলেন। হতাশার সুরে তিনি বললেন, 'জাফর মাস্টার রাস্তায় বের হলেই যারা দূর থেকে সালাম দিয়ে চলে যেত, আজ জাফর মাস্টার বিছানা থেকে উঠতে পারে না দেখে সবাই তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে। আফসোস! একটু সবুর কর মা, সব ঠিক হয়ে যাবে।'

      'আর কবে ঠিক হবে বাবা? তুমি তো দিনদিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছো। তুমি না থাকলে তো সবাই আমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে।' ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজলো সুফিয়া। 

      'কাঁদিস না মা। এটাই হয়তো আমাদের নিয়তি।' মেয়েকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলালেন জাফর মাস্টার। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, 'আজ পত্রিকার হকার আসেনি?'

     সুফিয়া কান্না থামিয়ে চোখ মুছে বললো, 'হকার   তো প্রতিদিন আসে এগারোটার সময়। এখন বাজে কেবল নয়টা। তোমার কী হয়েছে বলো তো বাবা? কয়েকদিন ধরে দেখছি হকার আসার আগে থেকেই তার খোঁজ করো?'

     'কিছু হয়নি। রিহান ছেলেটার কথা খুব মনে পড়ে। বেচারা ছেলেটা অভিমান করে কোথায় যে গেল?'

     রিহানের কথা উঠতেই সুফিয়ার চেহারাটা বিবর্ণ হয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে সে শীতল কণ্ঠে বললো, 'তুমিও তো বাবা সেদিন আটকাওনি তাকে। আমিই না হয় সেদিন তার উপর একটু রেগেছিলাম।'

      'কী করে আটকাতাম বল? লোকের বিষ দাঁত তোর বাবাকে যে প্রতিনিয়ত কামড় দিতো? ছেলেটাও বড্ড অভিমানী। সেই যে গেল, একটিবারও দেখতে এলো না। কোথায় আছে? কী অবস্থায় আছে সে? আল্লাহ-ই জানেন।' দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন জাফর মাস্টার। সুফিয়াও অন্যমনস্ক হয়ে  গেল হঠাৎ। কিছু মুহূর্ত নীরবে কেটে গেল। জাফর মাস্টার জানালা দিয়ে দূরের পরিবেশটায় দৃষ্টি ফেললেন। অনেকদিন তিনি বাইরের হাওয়া গায়ে লাগাতে পারছেন না। সময় কতকিছু বদলে দেয়! মেয়ের দিকে দৃষ্টি ফিরালেন তিনি। বললেন, 'একটু গোসল করাতে পারবি মা? শরীরটা কেমন যেন করছে।'

      সুফিয়া  উঠে বড়ো একটা গামলায় করে পানি আনলো। একটা তোয়ালে সেই পানিতে ভিজিয়ে ভিজিয়ে বাবার সারা শরীর মুছে দিলো। তারপর বাবার গায়ের কাপড়গুলো বদলে দিয়ে বললো, 'তুমি থাকো বাবা, আমি দুপুরের রান্নাটা করে আসি।' 

     সুফিয়া রান্না করতে চলে গেল। আরও অনেকক্ষণ পর হকার এলো পত্রিকা নিয়ে। সুফিয়া বাইরে বের হয়ে পত্রিকা এনে বাবাকে দিতে দিতে বললো, 'ধরো তোমার পত্রিকা। পড়তে থাকো। আমার রান্না এখনও শেষ হয়নি।'

     বাবার হাতে পত্রিকা দিয়ে সুফিয়া পুনরায় রান্নাঘরে এলো। তরকারিতে লবণ ঠিকঠাক হয়েছে কি না দেখে আরেকটু লবণ ছিটিয়ে দিলো। 

      পত্রিকায় চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ নবযুগ পত্রিকার একটা শিরোনামে চোখ আটকে গেল জাফর মাস্টারের। এই নিউজটা দেখার জন্যই তিনি প্রতিদিন হকারের খোঁজ করতেন। সেদিন রিহান জোর গলায় কথাটি বলার পর থেকে জাফর মাস্টার অপেক্ষায় ছিলেন এই দিনটার। যদিও সেই সময় তিনি রিহানের কথা বিশ্বাস করেননি, তবুও তিনি রিহানকে মিথ্যা প্রমাণ করতে খোঁজ করতো পত্রিকার। রিহান যখন এক মাস পর আসবে, তখন যেন বলতে পারেন, 'এই দেখো, তোমার কোনো কথা-ই সত্যি হয়নি।' কিন্তু পত্রিকার আজকের শিরোনাম দেখে মাস্টার সাহেব নিজেই তাজ্জব বনে গেলেন। কী করে এটা সম্ভব? রিহান কী করে একমাস আগে থেকে জানলো কাজী নজরুল সাহেব দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলবেন? উত্তেজিত হয়ে তিনি মেয়েকে ডাকলেন, 'সুফিয়া সুফিয়া...'

     'আসছি বাবা, তরকারিটা নামিয়ে আসছি...'

     'তাড়াতাড়ি আয়, দেখে যা।'

     'এইতো, হয়ে গেল। আসছি...'

     আরও কিছুক্ষণ পর সুফিয়া তরকারির পাতিলটা চুলা থেকে নামিয়ে বাবার ঘরে গিয়ে দেখলো, বেগম পত্রিকাটা নিচে পড়ে আছে। আর নবযুগ পত্রিকাটা বাবা বুকের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। সুফিয়া নিচ থেকে বেগম পত্রিকাটা তুলে জিজ্ঞেস করলো, 'কেন ডাকছো? এরইমধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে না-কি বাবা?'

      জাফর মাস্টার কোনো সাড়াশব্দ করলেন না। সুফিয়া পুনরায় ডাকলো, 'বাবা... বাবা...'

      এবারও কোনো সাড়া না পেয়ে সুফিয়া ভয় পেতে শুরু করলো। ভয়ে ভয়ে বাবার গা ধরে ঝাঁকিয়ে ডাকলো, 'বাবা, কথা বলছো না কেন?'

      ততক্ষণে জাফর মাস্টারের দেহটা নিস্তেজ হয়ে গেল। সুফিয়া তাঁর নিস্তেজ দেহটা ধরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠলো। তার চিৎকার শুনে পাশের বাড়িগুলো থেকে কয়েকজন ছুটে আসতে লাগলো। তারা এসে নিশ্চিত করলো, জাফর মাস্টার আর বেঁচে নেই।

      বাবার মৃত্যুর পর বড্ড একাকি দিন কাটতে লাগলো সুফিয়ার। ঘর থেকে বের হয় না, কারও সাথে কথা বলে না। ঠিকভাবে খায় না। পাশের বাড়ির এক খালা মাঝেমধ্যে তার জন্য খাবার নিয়ে আসে। তখন ইচ্ছে হলে খায়, নয়তো রেখে দেয়। বিকেল হলে বাচ্চারা আগে তাদের উঠোনে খেলতে আসতো, এখনও আসে, তবে সুফিয়ার মন খারাপ দেখে খেলে না। তারা সুফিয়ার পাশে বসে মন ভালো করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নিজেরাও মুখ কালো করে ফেলে। সন্ধ্যা হলে সবাই যার যার বাড়িতে ফিরে যায়। এভাবেই কাটতে থাকে সুফিয়ার দিনগুলো। কাজী নজরুলের অসুস্থতার কথা সে শুনেছে। তবে খুব বেশি দাগ কাটতে পারেনি তার মনে, কারণ- এরচেয়ে গভীরভাবে দাগ কেটে গেছে তার বাবার মৃত্যু। 

     অনেকদিন বাজারও করেনি সুফিয়া। বাবা নেই, কার জন্য বাজার করবে সে? কার জন্য রান্না করবে? তবে এভাবে চলতে থাকলে একদিন সেও অসুস্থ হয়ে পড়বে বাবার মতো। নিজেকে শক্ত করলো সে। বাজারে গেল সে আজ। অনেকদিন পর সে আজ বাড়ির টিনের গেইটটা পেরোলো। বাজারে গিয়ে নিজের পরিমাণ মতো বাজার করলো। ফেরার সময় দেখলো কিছু লোক চাঁদা তুলছে নজরুলের চিকিৎসার জন্য। সুফিয়া বাজারের ব্যাগ নিয়ে ওদিকে এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলো তাদের, 'নজরুল সাহেবের এখন কী অবস্থা?'

       একজন জবাব দিলো, 'উনার অবস্থা আরও খারাপের দিকে। কথা বলার শক্তি তো একদম হারিয়ে ফেলেছেন। আগে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এখন মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।'

      সুফিয়ার শাড়ির কোণায় একশো টাকা বাঁধা ছিল। সুফিয়া টাকাগুলো বের করে কী যেন ভাবলো। বাবার কথা মনে পড়লো তার। বাবা বেঁচে থাকতে তার জন্য খুব চিন্তা করতো। বাবা একদিন বলেছিল, 'বসে বসে খেলে রাজার অঢেল সম্পদও একদিন শেষ হয়ে যায়। মা রে, আমার তো অল্প জমানো টাকা আছে। আমার যদি কিছু হয়ে যায়, তোর তখন কী হবে? তুই কী খেয়ে বাঁচবি?'

      সুফিয়া কিছুটা ধমকের সুরে বলেছিল, 'বাবা, এসব বলো না তো। আমার কষ্ট হয়।'

      আজ সত্যি সত্যি বাবা তাকে একা করে চলে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাতের একশো টাকা চাঁদার বাক্সে ফেলে সুফিয়া বললো, 'দোয়া করি, নজরুল সাহেব যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।' বলেই আড়ালে চোখ মুছে হনহন করে হাঁটতে লাগলো সুফিয়া।

      ঘরে এসে রান্না করতে লাগলো সে। একা খাবে, তাই অল্প রান্না করতে বেশিক্ষণ লাগলো না। বাইরে পত্রিকার হকার এসে আরেকবার বাবার কথা মনে করিয়ে দিলো তাকে। হকার থেকে দুটো পত্রিকা নিলো সুফিয়া। তারপর জিজ্ঞেস করলো, 'মাস শেষ হতে আর ক'দিন বাকি?'

      'ছয়দিন আপা।'

       'ঠিক আছে। আর ছয়দিন পত্রিকা দিয়ে হিসাব করে টাকা নিয়ে নিয়েন। এরপর আর পত্রিকা দিতে হবে না।'

       'আচ্ছা, আপা।'

       হকারটা চলে গেল সাইকেল চালিয়ে। সুফিয়া বারান্দায় বসে পত্রিকা পড়তে চাইলে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে। আজকাল পত্রিকাগুলোও পড়তে মন চায় না তার। কেবল শোকের নিউজ ছাপা হয়। তারপরও শিরোনামগুলো পড়তে থাকলো সে। এর কিছুদিন পর হকারকে সব টাকা হিসাব করে বুঝিয়ে দিয়ে পত্রিকা নেয়া বন্ধ করে দিলো চিরতরে। 

      গভীর রাত। সুফিয়ার চোখে ঘুম নেই। আজ বাবার পাশাপাশি রিহানের কথাও খুব মনে পড়ছে তার। লোকটা সেই যে গেল, আর খোঁজ নাই। বাবা যে মারা গেল, একটু দেখতেও এলো না। হয়তো বাবার মৃত্যুর সাংবাদটাও সে পায়নি। পেলে অবশ্যই আসতো। লোকটা এতটাও খারাপ না। সুফিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রু বের হয়ে এলো হঠাৎ। কার কথা ভেবে এই অশ্রু? বাবার কথা ভেবে? না-কি রিহানের? না-কি দুজনের কথা ভেবে?

      দরজায় 'খটখট' শব্দ হলো। প্রথমে সুফিয়া পাত্তা দিলো না ব্যাপারটা। কিন্তু পরক্ষণে বুঝলো, কেউ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। সুফিয়া অশ্রু মুছে ঘরের আলো জ্বাললো। তারপর রান্নাঘর থেকে মাছ কাটার বটিটা হাতে নিয়ে প্রস্তুতি নিলো। যে হবে হোক, আজ তার রক্ষা নেই। এতো রাতে একটা মেয়ের ঘরে যে দরজা ঠেলে, সে নিশ্চয়ই ভালো লোক নয়। সুফিয়া নিজেই দরজা খুললো। দেখলো বখাটে করিম তার দুপাটি দাঁত বের করে শয়তানের মতো হাসছে। সুফিয়ার হাতের বটিটা সে খেয়াল না করেই ঘরে ঢুকে পড়লে, সুফিয়া তার গলায় বটির কোপ বসায়। জোরে আর্তনাদ করে উঠে করিম। সুফিয়া এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে তার পুরো শরীর। মুহূর্তেই রক্তে ভেসে গেল পুরো ঘর। চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়িঘর থেকে লোকজন ছুটে আসতে লাগলো। মুহূর্তেই একটা রব পড়ে গেল ওখানে। সবাই উচিত কাজ হয়েছে বললেও সুফিয়ার কপালটা মন্দ ছিল। সেই মুহূর্তে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল একটা ব্রিটিশ সেনাদের গাড়ি। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে গাড়িটা থামে। কয়েকজন ব্রিটিশ সেনা আসে ওখানে। সব দেখে ওরা লাশ আর সুফিয়াকে তুলে নিয়ে যায়। 

টুয়েন্টি মিনিটস - সকল পর্ব

 একমাস সুফিয়াকে একটা কারাগারে রাখা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিটিশদের একটা ক্যাম্পে। ওখানে বৃটিশরা তৈরি করেছে আরেকটা কারাগার। সেই কারাগারে রয়েছে ছোটো ছোটো অনেকগুলো অন্ধকার কক্ষ। একটা কক্ষে সুফিয়াকে ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় লোহার দরজা। ভেতর থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। সুফিয়ার হাতে পায়ে শেকল পরা ছিল। অন্ধকার রুমে হাঁটতে গিয়ে শেকলের ঝংকার শোনা গেল। হঠাৎ শেকলে পা প্যাঁচিয়ে পড়ে গেল সুফিয়া। একটা লোকের গায়ের উপর পড়েছে। লোকটার সারা মুখে লম্বা দাড়ি অনুভব করলো সে। লোকটারও হাত পা শেকল দিয়ে বাঁধা। সুফিয়া লোকটার কাছে মাফ চেয়ে গায়ের উপর থেকে সরতে চাইলে, লোকটা তার হাত ধরে ডাক দেয়, 'সুফিয়া...'

       হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় সুফিয়ার। উত্তেজিত হয়ে বলে,  'কে? কে ডাকে আমার নাম ধরে?'

চলবে...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url