ভাবি যখন বউ - পর্ব ১৪-১৫ । Golpo Porun

ভাবি যখন বউ

(জুয়েল)

Bhabhi jokon bou
This Photo is from Google

ভাবি যখন বউ - পর্বঃ ১৪

বিকালবেলা অবন্তীকে কল দিলাম, কিছুক্ষণ পর অবন্তী কল ধরলো.... 

আমিঃ ওই কল ধরতে এতো দেরি করো কেন? 

অবন্তীঃ ধুর বইলো না, বাচ্চাকাচ্চা গুলা পুরা পাগল করে দিচ্ছে। আমার সব জিনিষ এলোমেলো করে ফেলেছে। 

আমিঃ ও,,,

অবন্তীঃ এই জুয়েল! 

আমিঃ হুম বলো! 

অবন্তীঃ কি করো? 

আমিঃ এতোক্ষন কাজ করলাম তাই তোমার খবর নিতে পারিনি,  তাই এখন কল দিলাম।

অবন্তীঃ ও আচ্ছা। 

আমিঃ তুমি কি করো? 

অবন্তীঃ এই তো পার্লারে যাবো  রেড়ি হচ্ছি। 

আমিঃ আমি আসবো? 

অবন্তীঃ তুমি আসবা কেন? 

ভাবি যখন বউ - সকল পর্ব

আমিঃ তোমাকে কিভাবে সাজায় দেখবো, আর সাজালে কেমন লাগে সেটাও দেখবো। 

অবন্তীঃ অতো দেখতে হবে না। সারা জীবন দেখছো, ভবিষ্যতেও দেখবা। সো টেনশন করার দরকার নেই। 

আমিঃ হুম। 

অবন্তীঃ আচ্ছা রাখি, পরে কথা বলবো। 

কলটা কেটে দিলো। বিকাল থেকেই মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে। একে একে সবাই আসলো। আয়মানও ব্যস্ত.....

আয়মানঃ কিরে তুই এখানে? 

আমিঃ হুম, আচ্ছা তুই আমাদের বন্ধের সবাইকে কল দিয়ে দেখতো ওদের কি অবস্থা! কখন আসবে? 

আয়মানঃ আচ্ছা দিতেছি। লিমা আসবে? 

আমিঃ যাহ শালা! আমি তো লিমার কথা ভুলেই গেছিলাম। দাঁড়া কল দিই, ও না থাকলে আমার বিয়েও হতো না। 

লিমাকে কল দিলাম,,,,,

আমিঃ হ্যালো লিমা! 

লিমাঃ হুম দোস্ত বল। 

আমিঃ কিরে তুই আসছিস না। 

লিমাঃ আমি এসে কি করবো, তোরা সেরে নে। আমি নাহয় কালকে আসবো। 

আমিঃ কালকে আসবি মানে!আমি এতো কিছু বুঝি না। তুই এক্ষুনি আসবি। 

লিমাঃ কিন্তু আমার সাথে তো সানি আছে। 

আমিঃ তো সমস্যা কোথায়? সানিরেও নিয়ে আয়। 

লিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,নিয়ে আসছি। 

আমিঃ হুম তাড়াতাড়ি আয়। 

কল কেটে দিলাম। তারপর আরো কিছু কাজ সেরে নিলাম। সন্ধ্যায় গোসল করে নিলাম। এরপর রেড়ি হলাম, আয়মান আমাকে সাজিয়ে দিলো। দুজনে একই পাঞ্জাবি পরলাম। 

রাত ১১ টা পর্যন্ত গান বাজনা হলো। আমার বন্ধুরা হাকিম, ফাহাদ, ফারুক, সাদ্দাম সবাই উরাধুরা নাচলো। ওদের সাথেও আমিও নাচলাম। আসলে নিজের বিয়েতে নিজে নাচার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। 

কিছুক্ষণ পর লিমা আসলো, আমি ওর সাথে কথা বলে নিলাম, ও সানির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর ওদের ভিতরে যেতে বলি। 

১১ টার পর হলুদের কাজ শুরু হলো। শুরুতেই আব্বু আম্মু দুজনে আসলো, আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে যখন হলুদ মাখতে যাবে তখনই দুজনে কাঁধতে শুরু করলো আমাকে জড়িয়ে ধরে। 

আমিও নার্ভাস হয়ে গেলাম। তারপর আয়মান হাকিম ফাহাদ এসে উনাদের সব বুঝিয়ে আবারও পরিস্থিতি ঠিক করলো। 

তারপর আয়মান, হাকিম, ফাহাদ, লিমা, সানি, সাদ্দাম একে একে এসে হলুদ মেখে গেলো। আত্নীয় স্বজন সবার হলুদ দেওয়া শেষ শুধু একজন ছাড়া,যে জীবনেও আমাকে হলুদ দিতে পারবে না। সে হচ্ছে আমার ভাই, ভাইয়া বেঁচে থাকলে হয়তো ভাইয়া সবার আগে আমাকে হলুদ দিতো। 

ভাইয়ার কথা মনে পরতেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো। 

আমার মন খারাপ দেখে বন্ধুরা সবাই আসলো....

আয়মানঃ কিরে আপসেট কেন? 

আমিঃ এমনি। 

হাকিমঃ মামা একটা কাজ কর। 

আমিঃ কি? 

হাকিমঃ চল তোর বউকে হলুদ দিয়ে আসি। 

আমিঃ আরে ধুর জামাই কখনো বউকে হলুদ দিতে দেখেছিস? 

ফাহাদঃ আরে ব্যাটা কয়জন জামাই পারবে নিজের বউকে গায়ে হলুদ দিতে। চল এটা হবে অন্যরকম গায়ে হলুদ। 

আমিঃ তারপরেও.... 

হাকিমঃ আরে ব্যাটা এতো কথা বলদ কেন? চলতো,,,

আমিঃ এতো রাতে গাড়ি কোথায় পাবি? 

আয়মানঃ গাড়ি লাগবে না, বাইক আছে। আমার টা আর ফাহাদের টা নিলে হয়ে যাবে। 

আমিঃ আচ্ছস ঠিক আছে চল। 

এরপর বাইক নিয়ে আমি আর হারামি গুলা অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা, গভীর রাত হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি তেমন নেই। 

স্পিডে চালিয়ে অবন্তীদের বাসার সামনে চলে গেলাম। 

গেইট পার হয়ে ভিতরে গেলাম। চারপাশে কেমন হইচই,আমার এক প্রকার লজ্জাও করতেছে। 

হলুদের রাত কোথায় জামাই নিজের বাসায় থাকবে সেটা না করে বউয়ের বাসায় চলে এসেছে। মানুষ কি বলবে আল্লাই জানে। 

আমাদের কে দেখে সবাই একটু অবাক হলো। আসলে হওয়ারই কথা, অবন্তীর বাবা এগিয়ে আসলো। 

শ্বশুরঃ আরে জুয়েল! বাবা আসো আসো... 

হাকিমঃ জুয়েলের অনেক ইচ্ছা হইছে, সে নাকি অবন্তীকে মানে আপনার মেয়েকে হলুদ লাগাবে। 

শ্বশুর হাসতে লাগলো, হারমিটা আমাকে জায়গা মতো বাঁশ দিলো। 

শ্বশুর সামনে দিয়ে হাটতে লাগলো আর আমরা পিছনে,,,

আমিঃ এই শালা আমি এসেছি নাকি তোরা নিয়ে আসছিস? 

ফাহাদঃ ঠিক আছে চল তাহলে তোর হলুদ দেওয়া লাগবে না। 

আমিঃ মানে কি! তাহলে নিয়ে আসলি কেন? 

হাকিমঃ এই চুপ থাক। আমরা এসেছি ভালো কোনো মেয়ে পাই কিনা সেটা দেখার জন্য। 

আমিঃ শালা, এতোক্ষনে তোদের মতলব বুঝেছি। দাঁড়া আমি সবাইকে বলে দিবো। 

ফাহাদঃ তাহলে বলবো তুই বাসা থেকে চুরি করে এখানে এসেছিস। কাওকে না জানিয়ে, পিছনের দরজা দিয়ে চোরের মতো বের হয়ে এখানে এসেছিস। 

আমিঃ ব্যাল্ক মেইল করছি। 

আয়মানঃ এই চুপ থাক। আগে ভিতরে চল।

ভিতরে গেলাম। সবাই অবন্তী কে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত। আমাদের কে দেখে একটু টাসকি খেলো। 

ভিতরে গিয়ে বসলাম। অবন্তীর হলুদ লাগানো প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর কয়েকজন বাকি আছে। 

অবন্তীর আত্নীয়রা সবাই এসে আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। যথেষ্ট আপ্যায়ন করা হলো। 

অবন্তী আমাকে দেখে বার বার তাকাতে লাগলো। আর অবন্তীর দিক থেকে চোখ অন্য কোথাও ফিরাচ্ছি না। কারন অবন্তীকে অসাধারণ লাগছে। 

আমরা গিয়ে কয়েকটা চেয়ার নিয়ে বসলাম। আমাদের কে হলুদ দেওয়ার জন্য ডেকে নিলো। 

প্রথমে সাদ্দামকে পাঠালাম, তারপর ফাহাদ, হাকিম, আয়মান সব শেষে আমি। 

আমি গিয়ে অবন্তীর পাশে বসলাম। কানে কানে বললাম.....

আমিঃ সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম? 

অবন্তী মুছকি মুছকি হাসছে, একটু পর হাকিম এসে আমার কানে কানে বললো....

" বাটির মধ্যে যতো গুলো হলুদ আছে সব গুলো একসাথে মাখবি, যদি একটুও কম হয় তাহলে এখানে চিৎকার দিয়ে এমন বাঁশ দিবো কল্পনাও করতে পারবি না। 

আমি পুরা আবুল হয়ে গেলাম। বাকি হারামি গুলোর দিকে তাকালাম ওরা ইশারায় সেটা করতে বললো।

কি করবো বুঝতে পারছি না। এমন সময় অবন্তী একটা মিষ্টি  আমার মুখের সামনে তুলে ধরে।  আমার দিকে তাকিয়ে মুছকি একটা হাসি দিলো, আমি খেয়ে নিলাম তারপর ওরেও খাইয়ে দিলাম। 

তারপর অবন্তী অল্প একটু হলুদ নিয়ে আমার মুখে আর গলায় মেখে দেয়, আমি ওই হারামী গুলোর দিকে তাকালাম। সবাই ইশারায় বলতেছে সব গুলো লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। 

তারপর আমি অবন্তীকে ইশারায় অন্য দিকে তাকাতে বললাম, সে যখন অন্য দিকে তাকালো। আমি পুরো বাটির হলুদ নিয়ে ওর মুখে মেখে দিলাম। অবন্তী তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলো। তারপর অবন্তী ওর মুখ থেকে কতো গুলো হলুদ নিয়ে আমার চোখ, কান গলা আর কোথাও বাকি রাখেনি। 

হাকিম, ফাহাদ আর আয়মান আমার কাছে আসলো, তারপর ওরাও আমাকে পুরো শরীরে হলুদ লাগাতে শুরু করলো। 

আয়মান আমাকে ডাক দিয়ে সাইডে নিয়ে আসে। গিয়ে দেখি বাকিরাও আছে। 

আমিঃ কিরে এখানে নিয়ে আসলি কেন? 

আয়মানঃ জুয়েল বন্ধু আরো একটা কাজ বাকি আছে। 

আমিঃ আবার কি? 

ফাহাদঃ তুই অবন্তীকে কোলে নিয়ে রুমে দিয়ে আসবি। 

আমিঃ মানে কি! এতো মেহমানের সামনে ওরে কোলে নিলে সবাই কি বলবে? 

হাকিমঃ আরে ব্যাটা লোকে বলুক তাতে তোর সমস্যা কোথায়? তুই তোর বউকে কোলে নিবি। 

আমিঃ আরে না এটা হয় না। 

ফাহাদঃ হবে হবে, সব হবে। 

আমিঃ কেমনে? 

হাকিমঃ সবার সামনে গিয়ে বলবো আপনাদের আদরের জামাই এখানে আসার আগে মদ খেয়ে আসছে, যার কারনে এগুলো করতেছে। 

আমিঃ মানে কি! সবাই তো জানে আমি ভালোবেসে এগুলো করছি। 

ফাহাদঃ তোমার ভালোবাসার উপর একটু পরই ঠাডা পড়বে। 

আমিঃ না ভাই এগুলো করিস না। আমার একটা ইজ্জত আছে। 

হাকিমঃ তোর ইজ্জতের গুষ্টি গিলাই। যেটা বলছি সেটা কর,,, 

আমিঃ তুই অন্তত আমাকে সাপোর্ট দে,, (আয়মানকে)

আয়মানঃ আরে রাখ তোর সাপোর্ট, ওরা যেটা বলেছে সেটাই কর। 

আমিঃ এই সাদ্দাইম্মা, তুই অন্তত আমার পক্ষে থাক। 

সাদ্দামঃ আমি তোর পক্ষে থাকি আর ওরা সবাই আমাকে মারুক, দরকার নেই ভাই। ওরা যেটা বলেছে সেটাই কর। 

পড়ে গেলাম মাইনক্যা চিপায়। 

আমিঃ আচ্ছা দাঁড়া! একটু পর।

আয়মানঃ আগে স্টেজে চল। 

তারপর আবারও স্টেজের সামনে আসলাম। দেখলাম অবন্তী ওর কাজিন আর বান্ধবীদের সাথে নাচতেছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি,,,, 

আয়মানঃ কিরে তুই নাচবি নাকি? 

আমিঃ আর বাঁশ দিস না ভাই, এমনিতে যেগুলো দিছস সারা জীবন মনে থাকবে। 

হাকিমঃ এই জুয়েল! মামা এবার যা,,, সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে। 

আমিঃ একটু পর যাই। 

ফাহাদঃ শালা এখন যাবি নাহলে,,,,,

আমিঃ না না ভাই যাচ্ছি। 

শালা তোরা বন্ধু নামের শত্রু, এতো সুন্দর করে সাজিয়ে আমাকে বাঁশ দিবে কল্পনাও করিনি। 

যাই হোক ৫০০ গ্রাম সাহস নিয়ে অবন্তীর সামনে গেলাম। 

সে আমাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো "কি"!! 

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ওরে একটা টান দিতে কোলে তুলে নিলাম। বিয়ে বাড়ির সবাই তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 

এদিকে আয়মান, হাকিম, ফাহাদ তালি দেওয়া শুরু করলো, ওদের তালি দেওয়া দেখে বাকিরাও তালি দেওয়া শুরু করলো। 

অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, তারপর আমার বুকে মাথা লুকিয়ে ফেলে। আমি অবন্তীকে কোলে নিয়ে ওর রুমে নিয়ে গেলাম। 

খাটের উপর রাখলাম। তারপর আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম। 

অবন্তীঃ ওই কি করো? 

আমিঃ কিছু না, জাস্ট একটু!!! 

অবন্তীঃ এই না, এখন না। গায়ে হলুদে এগুলো কেউ করে না। 

আমিঃ সমস্যা কোথায়, কালকে তো বিয়ে হবেই। 

অবন্তীঃ জ্বি না মশাই, কালকেই করিয়েন। 

আমিঃ আজকে এখানে থেকে যাই? 

অবন্তীঃ কোনো দরকার নেই। আজকে চলে যাও, কালকে তো দেখা হচ্ছেই। 

আমিঃ তাহলে একটা আদর দাও। 

অবন্তীঃ মাইর খাবা বলে দিলাম। যাও এখন কেউ চলে আসবে, দরজাও খোলা। 

আমিঃ দাঁড়াও দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসি। 

যখন উঠে দরজার কাছে গেলাম। দেখলাম অবন্তীর কাজিনরাই সবাই আসতেছে। 

ধুর সবাই জায়গায় আমি ব্যার্থ, অবন্তীর দিকে একরাশ হতাশা নিয়ে তাকালাম সে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। 

তারপর ওর রুম থেকে চলে আসলাম। বাইরে এসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আবারও আমাদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। 

আমি বাইকের পেছনে বসে আছি। আয়মান ড্রাইভ করতেছে আর বাকি হারামি গুলা আমারে নিয়া ট্রল করতেছে। 

একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো। যদিও বাঁশ দিয়েছে কিন্তু আমারই উপকার হয়েছে। 

যাইহোক অবশেষে বাসায় চলে আসলাম। এসে ওদের সবাইকে রুম দেখিয়ে দিলাম ঘুমানোর জন্য। 

আমি রান্না ঘরে গেলাম, কোথাও হলুদ আছে কিনা দেখার জন্য। 

হুম একটা ছোট বাটির মধ্যে অল্প একটু আছে। 

আমি ওগুলো নিয়ে বের হয়ে গেলাম। সবাই হলুদ দিয়েছে শুধু একজন ছাড়া। তার কাছেই যাচ্ছি,,,,, 

আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি। সব কিছু ভুলে গেলেও আমার ভাইয়ার কথা আমি ভুলিনি, এতো আনন্দের মধ্যেও ভাইয়ার শূন্যতা আমি অনুভব করি। 

হাটতে হাটতে ভাইয়ার কবরের পাশে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম, তারপর বলতে শুরু করলাম। 

""" ভাইয়া কেমন আছিস? আমি জানি তুই অভিমান করে আছিস। প্লিজ ভাই অভিমান করিস না। আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর তোর কথা আমার মনে ছিলো। 

ভাইয়া তুই তো জানিস আজকে আমার গায়ে হলুদ। সত্যি বলতে আজকে গায়ে হলুদের কোনো কথা ছিলো না। কারন আমার বিয়েটা অনেক আগেই হয়ে গেছে। হুম অনুষ্ঠান ছাড়া হয়েছে, কিন্তু ছোট বেলার ইচ্ছা আর অবন্তীর জন্যই এই অনুষ্ঠান টা করতেছি। 

ভাইয়া সবাই তো আমাকে হলুদ দিলো, তুই দিবি না? জানি তুই অভিমান করে আছিস কারণ আমি তোর অবন্তী কে বিয়ে করছি তাই। 

কিন্তু বিশ্বাস কর আমি জীবনেও কল্পনা করিনি এমনটা হয়ে যাবে। আমারও ইচ্ছা ছিলো তোর মতো ভালো চাকরি পেয়ে তারপর মেয়ে দেখে বিয়ে করবো। 

তোদের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো এটাই ইচ্ছা ছিলো। আমি সব সময় ভাবতাম আমার বিয়েতে তুই কি পরিমাণ ব্যস্ত থাকবি। 

তোর মনে আছে ভাইয়া তোর বিয়েতে সবার শেষে আমিই তোকে হলুদ দিয়েছিলাম আর পুরো বাটি দিয়ে দিয়েছিলাম। তুইও আমাকে দিয়েছিলি। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়েছিস। 

আজকে যখন আমি অবন্তীকে পুরো হলুদ মেখে দিলাম তখন অবন্তীর চেহারায় আমি তোকে দেখেছিলাম। 

জানিস ভাইয়া আমার বুক ফেটে কান্না আসতে ছিলো কিন্তু কাওকে কিছু বুঝতে দিই নি। 

ভাইয়া তুই তো আমাকে হলুদ দিতে যাসনি, তাই আমিই চলে আসছি, দিবিনা ভাইয়া আমাকে হলুদ? দেখ সত্যিই আমি আসছি। নিবি না আমাকে বুকে জড়িয়ে, ডাকবি না জুয়েল বলে। আর একবার ডাকনা ভাইয়া তোর মুখ থেকে আবার জুয়েল ডাকটা শুনতে চাই। 

দেনা ভাইয়া আমাকে একটু হলুদ লাগিয়ে, অল্প একটু দে ভাইয়া। আচ্ছা তোর দেওয়া লাগবে না। আমিই তোকে লাগিয়ে দিচ্ছি,,,,,, 

তারপর বাটি থেকে হলুদ গুলো নিয়ে কবরের উপরে ভাইয়ার মুখ বরাবর মেখে দিলাম। না পারলাম না আর চোখের পানি ধরে রাখতে। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম। 

আমি ভাইয়ার কবরের কাছে বসে আছি এমন সময় আব্বু কল দিলো। 

আব্বুঃ কিরে কোথায় তুই? 

আমিঃ এই তো বাইরে আসছি। 

আব্বুঃ একটু পর ফজরের আজান দিবে, তুই বাইরে কি করিস? তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। 

আমিঃ আসছি! 

কল কেটে দিলো। আমি ভাইয়ার পাশে আরো কিছুক্ষণ বসে রইলাম তারপর উঠে বাসার দিকে হাটতে শুরু করলাম। 

কিন্তু মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না, পেছন থেকে টানতেছে। আসলেই আমার ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না। 

কারন আমি জানি এখানে আমার ভাইয়া খুব একা, যে ভাই বাসায় থাকতে আমাকে ছাড়া ঘুমাতো না  রাতে কোথাও গেলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতো। ভুতের ভয়ে বেশি রাতে বাসার বাইরে যেতো না সেই ভাই এখানে একা একা কি করে থাকবে। 

আমি স্বার্থপরের মতো হাটা দিলাম। ভাইয়ার কথা যতো মনে পরছে ততোই চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। 

অতঃপর আমি বাসায় চলে আসলাম, বাবার সাথে কথা বলে নিলাম। বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কোথায় গিয়েছি কারন পাঞ্জাবিতে মাটি লেগে আছে,,, বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, উনার চোখেও আমি স্পর্শ পানি দেখলাম। তারপর বললো " যা বাবা, অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পর" 

আমি কোনো কথা না বলে রুমে গিয়ে আয়মানের পাশে ঘুমিয়ে গেলাম। 

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো অবন্তীর কলে..... 

অবন্তীঃ কি ব্যাপার, নতুন জামাই ঘুমাচ্ছে নাকি? 

আমিঃ হুম! 

অবন্তীঃ ভালো, ভালো! এখন উঠে যাও। অনেক কাজ আছে। 

আমিঃ হুম, রেড়ি হবে কখন? 

অবন্তীঃ মাত্র উঠলাম, কিছুক্ষণ পর পার্লারে যাবো সেখান থেকে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে,,,, 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। 

অবন্তীঃ তাড়াতাড়ি উঠে যাও, আব্বু আম্মুকে একটু হেল্প করো। 

আমিঃ ওকে। 

অবন্তীঃ আচ্ছা রাখি এখন। 

অবন্তী কল কেটে দিলো। আমি হারামি গুলার দিকে তাকালাম। একটার শরীর খাটে পা ফ্লোরে, সাদ্দাম হা করে আছে। হাকিমের লুঙ্গি মাথার উপরে উঠে গেছে। 

আয়মানের মোবাইলটা নিয়ে সবার একটা ছবি তুললাম। শালারা এতোদিন আমাকে বাঁশ দিয়েছে। এবার দেখ আমি তোদের কিভাবে বাঁশ দিই। 

ছবি তুলে ওদের ডেকে দিলাম। আমি চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। 

বাইরে এসে দেখি সবাই উঠে গেছে, আমি গিয়ে নাস্তা করে আবার রুমে আসলাম। কমিউনিটি সেন্টারে কল দিলাম কি অবস্থা জানার জন্য, সেখানে আব্বু আর মামা আছে। যাক তাহলে আর সমস্যা নাই। 

হারামি গুলা এখনো ঘুমাচ্ছে। লাথি দিয়ে সবাইকে তুললাম। ওরা উঠে গেলো। নাস্তা করে নিলো। 

লিমা আর সানিকে দেখতেছিনা, তাই কল দিলাম। 

আমিঃ কিরে কই তোরা??? 

লিমাঃ আমরা তো কালকে রাতেই চলে আসছি। তোকে খুঁজেছিলাম। কিন্তু কোথাও পাইনি পরে আংকেল আন্টিকে বলে চলে আসছি। 

আমিঃ ও আচ্ছা। তো এখন চলে আয়,, 

লিমাঃ নারে আমরা সেন্টারে থাকবো। 

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস,,, 

হারামি গুলা নাস্তা করে আসলো। 

আয়মানঃ জুয়েল! 

আমিঃ বল,, 

আয়মানঃ তোর তো দুলাভাই নাই? 

আমিঃ না কেন? 

হাকিমঃ তোরে গোসল দেওয়ার জন্য। 

আমিঃ আমার গোসল কেন দুলাভাই দিবে? 

ফাহাদঃ আরে বিয়ের গোসল দুলাভাইরা দেয়।

আমিঃ আমারটা আমিই দিবো।

হাকিমঃ চল আমরা দিয়ে দিচ্ছি। 

আমিঃ তোরা কেন দিবি? 

আয়মানঃ চুপ থাক, চল এখন। 

ওরা জোর করে নিয়ে গেলো, তারপর টাউটারি করতে করতে গোসলটা শেষ করলো। রুমে এসে ফাটাফাটি করে রেডি করে দিলো। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ক্রাশ খেলাম। 

কিছুক্ষণ পর এই হারামি গুলো আমার সামনে এসে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে। 

আমিঃ কিরে কি হইছে? 

হাকিমঃ টাকা দে! 

আমিঃ কিসের টাকা? 

ফাহাদঃ গোসল করালাম যে! 

আমিঃ অদ্ভুত গোসল করালে টাকা দিতে হবে নাকি? আমার কাছে কোনো টাকা নাই। 

হাকিমঃ টাকা দিবি নাকি জায়গা মতো আমরা তোকে বাঁশ দিবো। 

আমিঃ আরে তুই বাঁশ দিবি আমিই তোদের বাঁশ দিবো। 

হাকিমঃ তাকি নাকি, দেখি তো তুই কি বাঁশ দিস। 

আমি আয়মানের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে হাকিমের লুঙ্গি উঠা ছবিটা দেখালাম, ওরা তো হাসতে হাসতে শেষ। 

আমিঃ টাকা আর নিবি? 

হাকিমঃ.... (মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে) 

তারপর সবাই রেড়ি হলো, আমি আর বন্ধুরা সবাই মেহমানদের কে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম।

সবার শেষে আমি আর হারামি গুলা একসাথে গেলাম। 

আমি গিয়ে বসে আছি কিন্তু অবন্তীর কোনো খবর নাই, কল দিলাম সে নাকি এখনো পার্লারে। 

মেয়েদের এতো কিসের সাজ আল্লাই ভালো জানে। 

খাওয়াদাওয়া শুরু হলো, হারামি গুলা আমাকে রেখে খেতে বসে গেলো। ওদের খাওয়া দেখে আমারও খেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু দুলা তো খাওয়ার সিস্টেম নাই। 

প্রায় ১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট পর অবন্তীকে নিয়ে আসলো। আমি ওরে দেখে হা করে তাকিয়ে আছি। 

আয়মান এসে একটা টোকা দিয়ে বললো....

আয়মানঃ ওই হা করে না থেকে ওর পাশে গিয়ে বস। যা,,, 

আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম, অবন্তী আমার কানের কাছে ওর মুখ এনে বললো.."""এই যে মি. জুয়েল"""" 

চলবে.......

ভাবি যখন বউ - পর্বঃ ১৫ শেষ পর্ব

আমি গিয়ে অবন্তীর পাশে বসলাম। অবন্তী আমার কানের কাছে ওর মুখ এনে বললো.... 

অবন্তীঃ এই যে মি.জুয়েল!!! 

আমিঃ জ্বি ম্যাম বলেন। 

অবন্তীঃ তোমার খবর আছে,, 

আমিঃ কেন আমি কি করেছি? 

অবন্তীঃ তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাইছো কেন? 

আমিঃ আরে আজব আমি কখন তাকালাম। 

অবন্তীঃ আমি নিজের চোখে দেখেছি, দাঁড়া বিয়েটা শেষ হোক তারপর তোমার ১২ টা বাজাবো। 

আমিঃ ওকে ম্যাম দেখা যাবে! আপনি আমার ১২ টা বাজান নাকি আমি আপনার ১২ টা বাজাই। 

অবন্তীঃ হুম দেখবো।

ভাবি যখন বউ - সকল পর্ব

আমিঃ আব্বু আম্মুর ইচ্ছার কথা মনে আছে? 

অবন্তী লজ্জায় আরো লাল হয়ে যায় আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছি।

একটু পর বড় প্লেটে করে খাওয়ার নিয়ে আসা হলো। আমি অবন্তীকে খাইয়ে দিচ্ছি অবন্তী আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আহ! কি এক ভালো লাগা সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। 

এতো আনন্দ বিয়েতে আগে জানা ছিলো না। খাওয়াদাওয়া শেষ, আমাদের আবার বিয়ে পড়ানো হবে না। কারন আমরা আগে থেকেই স্বামী স্ত্রী।

আগে যেহেতু কালিমা পড়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে অবন্তীকে বিয়ে করেছি এখন নতুন করে এগুলো লাগবে না। শুধু অনুষ্ঠান টা করে নিলাম। 

এরপর শুরু হলো ছবি তোলা, যদিও এর মধ্যে কয়েক হাজার ছবি উঠানো হয়ে গেছে। 

ছবি তোলা শেষে আমি আর অবন্তী সবার সাথে কথা বলে নিলাম। 

একেবারে শেষ মুহূর্ত অবন্তীকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছি। হারামী গুলা আসলো আমার কাছে। 

হাকিমঃ জুয়েল! বন্ধু,,, 

আমিঃ হুম বল। 

হাকিমঃ অবন্তীকে দেইখা রাখিস, বেশি কিছু করিস না। 

ফাহাদঃ হুম অবন্তী তোর ভাবি লাগে। সো রেসপেক্ট দিয়ে সব কিছু করবি। 

আমিঃ আরে হারামখোর! ভাবি আগে ছিলো এখন তো বউ। 

হাকিমঃ তবুও ভাবির দৃষ্টিতে দেখিস। 

আমিঃ চুপ থাক হারামি। 

আয়মানঃ ওই জুয়েল তুই গাড়িতে যা। অবন্তী উঠে গেছে  

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তোরা অন্য গাড়িতে বাসায় চলে আয়। আসলে দেখা হবে। 

আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা। 

তারপর আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম। অবন্তীর সাথে একদম গা লাগিয়ে বসলাম। 

অবন্তীঃ ওই আরো দূরে যাও। 

আমিঃ কেন সমস্যা কি? 

অবন্তীঃ ড্রাইভার আর ওরা দেখতেছে। 

আমিঃ দেখকে দেখুক। আমার কি? আমি আমার বউয়ের সাথে কিভাবে বসবো সেটা আমি বুঝবো। 

আমি অবন্তীর একটা হাত ধরলাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। 

গাড়ি চলছে তার আপন মনে। আমি অবন্তীর হাত ধরে স্বপ্নে হারিয়ে গেলাম। 

অনেকক্ষণ পর বাসায় আসলাম। আমার এক খালাতো ভাইয়ের বউ অবন্তীকে কোলে করে বাসায় নিয়ে যায়। 

আমি বের হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে বাইরে চলে আসলাম। তারপর হাকিম, ফাহাদ, আয়মান আর সাদ্দাম ওদের সাথে বাইরে বের হলাম। 

রাত ৯.০০ টার সময় সবাই বাসায় আসলাম। এসে খাওয়াদাওয়া করে সবাই ছাদে চলে গেলাম। অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। 

১০.০০ টার দিকে আব্বু ছাদে আসলো। 

আব্বুঃ জুয়েল তুই এখানে? 

আমিঃ জি আব্বু। 

আব্বুঃ এতো রাতে এখানে কি করিস। 

আমিঃ এই তো ওদের সাথে বসে আছি। 

আব্বুঃ আচ্ছা এবার রুমে যা। অবন্তী অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে। 

আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি, আপনি নিচে যান আমি আসছি। 

আব্বুঃ তাড়াতাড়ি আয়। 

আব্বু চলে গেলো। হারামী গুলা আমারে নিয়ে ট্রল করতে শুরু করে দিলো। 

হাকিমঃ যা বন্ধু যা। এই যুদ্ধে তুই যেন জয়ী হতে পারিস এ দোয়াই রইলো। 

ফাহাদঃ পানি লাগলে আমারে বলিস। 

আয়মানঃ সব কিছু ঠিক ভাবে করিস। (মুছকি হেসে)

ফাহাদঃ জুয়েল বন্ধু তোর লাইফটা অনেক দারুণ দুইবার বাসর। তাও আবার একই বউয়ের সাথে। 

আমি মনে মনে বললাম ওটা বাসর ছিলো না। আমার লাইফের সবচেয়ে বড় বাঁশ ছিলো। 

আমিঃ আচ্ছা তোরা যা। ঘুমিয়ে পড়, আজকে অনেক খাটাখাটি করেছিস। 

ফাহাদঃ আরে আমরা কি করেছি করবি তো তুই এখন। 

আমিঃ দূর শালা তোদের সাথে কোনো কথাই নাই। 

আমি নিচে চলে আসলাম। রুমের সামনে গিয়ে দরজায় হাত দিবো এমন সময় ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। 

আজকে তো আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করিনি। দরজার সামনে থেকে নিজেকে ঘুরিয়ে নিলাম। 

বের হয়ে হাটা দিলাম ভাইয়ার কাছে। ভাইয়ার কবরের পাশে গিয়ে বসলাম। 

"ভাইয়া কেমন আছিস। প্লিজ রাগ করিস না আমার আসতে দেরি হয়ে গেলো। তুই আবার এটা ভাবিস না আমি বিয়ে করে তোকে ভুলে গেছি। আরে পাগল তুই সব সময় আমার পাশেই আছিস। 

জানিস ভাইয়া আমি যখন বিয়ের পেড়িতে বসেছি তখন চোখের সামনে তোকে দেখতেছি। আমার মনে হচ্ছে তুই আমার বিয়ের সব কাজ করছিস। 

ভাইয়া আজকে আমার বাসররাত, তুই থাকলে হয়তো আরো বেশি মজা হতো বিয়েতে। আমি জানি তোর অবন্তীকে আমি বিয়ে করেছি দেখে তুই আমার উপর রাগ করে আছিস। কিন্তু কি করবো বল আমি না করলে অবন্তীর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যেতো। 

ভাইয়া আমি অবন্তী কে তোর মতো করে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। তুই আমার জন্য দোয়া করিস ভাইয়া। ""

এমন সময় অবন্তী কল দিলো। আমি কল কেটে দিলাম, আরো কিছুক্ষণ থেকে তারপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসায় ডুকে যেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম তখনই লিমা আর সানি আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়ালো।

লিমাঃ এই যে মি. জুয়েল! কোথায় যাওয়া হচ্ছে? 

আমিঃ তোর ভাবি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে। 

লিমাঃ কিন্তু আমাদের পাওনা। 

আমিঃ তোর আবার কিসের পাওনা? 

লিমাঃ বাহ ভুলে গেলি। 

সানিঃ এই যে এতো কষ্ট করে আপনার বাসরঘর সাজালাম। সেটার পাওনা। 

আমিঃ লিমা বোন আমার, সানি ভাই আমার আমাকে এখন মাফ করে দে। অন্যদিন ডাবল দিবো। 

লিমাঃ জি না মি. এখন মাফ করা যাবে না। 

আমিঃ আচ্ছা এই নে। (৫০ টাকা দিলাম)

লিমাঃ এটা কি দিলি? 

আমিঃ তোদের বখশিশ।

লিমাঃ ফকিন্নি ৫ হাজারের কমে এক টাকাও নিবো না। 

আমিঃ ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। এটা কি বললি? পুরো বিয়েতেও তো ৫ হাজার খরচ হয়নি। আর বাসর ঘরের জন্য ৫ হাজার দিবো? 

সানিঃ জি ভাইয়া, বাসর ঘরটাই তো আসল। 

শালা মাইনক্যা চিপায় পড়ে গেলাম। পরে ১ হাজার দিয়ে কোনমতে ভিতরে গেলাম। যাক আল্লাহ বাঁচাইছে। 

ভিতরে গেলাম দেখলাম অবন্তী গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আমি জানি দেরি করার কারনে এমন ভাবে গাল ফুলিয়ে রাখছে। 

আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম....

আমিঃ এই সরি সরি। 

অবন্তীঃ তোমার কোনো ক্ষমা নাই। 

আমিঃ এই সরি বললাম তো। আচ্ছা যাও কান ধরলাম। 

অবন্তীঃ উঠবস করো। 

আমিঃ এই না প্লিজ এটা করো না।

অবন্তীঃ তাহলে তোমার সাথে কথা নাই। 

আমিঃ প্লিজ কথাটা শোনো। 

অবন্তীঃ কি শুনবো, এতোক্ষন কোথায় ছিলা? 

যদি সত্যিটা বলি, আমি ভাইয়ার কাছে গিয়ে ছিলাম তাহলে অবন্তীর মন খারাপ হয়ে যাবে। হয়তো ভাইয়ার স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যাবে তাই বললাম....

আমিঃ আরে ওই হারামী গুলার সাথে ছিলাম আসতে দিচ্ছিলো না। তারপর এখানে আসার সমন লিমা আর সানি আক্রমণ করে। সব কিছু ঠিকঠাক করে আসতে একটু সময় লেগে গেছে। প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও আর হবে না। 

অবন্তীঃ মনে থাকে যেন। এবার রুমের বাইরে যাও।

আমিঃ বাইরে কেন? 

অবন্তীঃ আমি কাপড় চেইঞ্জ করবো। 

আমিঃ তো আমার সামনে করলে সমস্যা কি? 

অবন্তীঃ তুমি বাইরে যাবে নাকি মাইর খাবে। 

আমিঃ আচ্ছা বাবা যাচ্ছি। 

বাইরে চলে এলাম। প্রায় ১০ মিনিট হবে কিন্তু এখনো দরজা খুলছে না। আমি কল দিলাম,,,

আমিঃ এই কি হলো! 

অবন্তীঃ আর ২ মিনিট।

ধুর বাসরঘর এমন হয় নাকি। বিরক্ত লাগছে। আরো ৭ মিনিট মোট ১৭ মিনিট পর অবন্তী দরজা খুলে দিলো। 

আমি ভিতরে গেলাম। অবন্তী পাশে গিয়ে বসলাম। একটা হালকা নীল রঙ্গের শাড়ী পড়ে নিলো একটু অন্যরকম লাগছে। 

অবন্তীঃ এই তোমার অজু আছে? 

আমিঃ ছিলো বাট এখন নেই। 

অবন্তীঃ যাও অজু করে আসো। 

আমি ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে নিলাম। 

যখন অবন্তীর সামনে আসলাম তখন অবন্তী পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাবে এমন সময় আমি ওর হাত ধরে ফেললাম। ওরে বুকে জড়িয়ে বললাম। 

আমিঃ তোমার জায়গা পায়ে নয়, আমার এই বুকে। 

অবন্তীঃ আসো ২ রাকাত নামাজ পড়ে নিই। 

আমিঃ হুম। 

তারপর দুজনে নামাজ পড়ে নিলাম। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম, অবন্তীও আমার পাশে এসে বসলো। 

আমিঃ এই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। 

অবন্তীঃ মাইর দিবো। আজকে ঘুমটুম কিছু হবে না। আজকে সারা রাত গল্প করবো। 

আমিঃ এতো গল্প কোথায় থেকে আসবে? 

অবন্তীঃ চুপচাপ শুনতে থাকো। 

আমিঃ এইভাবে গল্প শুনে মজা নাই। 

অবন্তীঃ তো কিভাবে শুনবে। 

আমিঃ এই যে মনে করো আমি কারো কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবো আর সে আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গল্প করবে। 

অবন্তী মুছকি হাসলো, আমি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে গেলাম। আর অবন্তী আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আমাদের ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন গুলো বলতে শুরু করলো। 

অনেকক্ষণ পর আমি উঠলাম। তারপর অবন্তীর একটা হাত ধরে বললাম। 

আমিঃ মনে আছে। 

অবন্তীঃ কি?

আমিঃ আব্বু আম্মুর ইচ্ছে!!! 

অবন্তীঃ এই জুয়েল না একদম না। 

আমি অবন্তীর কোনো কথা না শুনে ওর হাত ধরে একটা টান দিলাম, সাথে সাথেই আমার সামনে চলে আসলো। আমি একটু একটু আগাচ্ছি আর অবন্তী পিছাচ্ছে। ওর ঠোট গুলো কাঁপতেছে। আমি আস্তে আস্তে ওর মুখের কাছে গেলাম। তারপর চার ঠোট এক হয়ে গেলো। দুজনেই হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে। শুরু হলো আমাদের নতুন জীবনের নতুন অধ্যায়,,,,,

****** ৫ বছর পর ******

অনাঃ আব্বু, এই আব্বু উঠো। অফিসে যাবে না? 

আমিঃ না মা আজকে অফিসে যাবো না। তোমাদের নিয়ে ঘুরতে যাবো। 

অনাঃ ও কি মজা কি মজা। আচ্ছা আব্বু কোথায় যাবে? 

আমিঃ সেটা নাহয় পরে বলবো। তোমার আম্মু কোথায়? 

অনাঃ আম্মু তো নাস্তা রেড়ি করছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। 

আমিঃ ওকে মামুনি। তুমি যাও আমি আসছি। 

ফ্রেশ হতে হতে আপনাদের কাহিনী টা বলে দিই। এই যে একটু আগে যে কথা বললো সে হচ্ছে আমার মেয়ে অনা। হুম, আমাদের কন্যা সন্তান হয়েছে। অনার চেহারাটা ভাইয়ার সাথে প্রায় মিল। ওর মধ্যেই আমরা ভাইয়াকে খুঁজে পাই। 

এই ৫ বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি আর অবন্তী একসাথে মাস্টার্স কমপ্লিট করি, তারপর আমি আগের অফিস মানে লিমাদের ওখান থেকে ভালো একটা অফিসে ম্যানেজার পদে চাকরি পাই। 

ইচ্ছা ছিলো লিমাদের ওখানেই থেকে যাবো। আমাদের বিয়ের কিছুদিন পর লিমারও বিয়ে হয়্র যায় সানির সাথে। তারপর তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। লিমার কোনো ভাই বোন না থাকায় তার আব্বু কোম্পানি বিক্রি করে লিমার ওখানেই চলে যায়। আমি অন্য একটা কোম্পানিতে চাকরি নিই। 

আয়মানও খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছে তবে আফসোস আমার ফ্রেন্ডটা আমার সাথে নেই। চাকরীর কারনে দুইজন দুই প্রান্তে। কিন্তু সব সময় কথা হয়। আর হাকিম ফাহাদ সাদ্দাম ওরাও চাকরি করে বিয়ে সাদি করে যে যার মতো সেটেল। মাঝেমধ্যে কথা হয়। 

আমার আর অবন্তীর সম্পর্কটা আরো গভীর হয়, ভালোবাসা দিনে দিনে অনেক বেড়ে যায়। 

ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। আমি আব্বু আম্মুকে রেড়ি হতে বললাম। উমারা সবাই রেড়ি হলো। 

তারপর নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে উনাদেরকে ঘুরানোর জন্য নিয়ে গেলাম। 

আসলে আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি। আমি গাড়ি নিয়ে সোজা ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম। 

আমরা সবাই গাড়ি থেকে নামলাম, নেমে ভাইয়ার কবর জিয়ারত করলাম। অনা বললো... 

অনাঃ আব্বু এখানে কি? 

আমিঃ এখানে তোমার বড় আব্বু আছে। 

অনাঃ উনাকে বলো না আমাদের সাথে ঘুরতে বের হতে!

আমিঃ হুম আম্মু বলেছি। রাতের বেলা আমাদের বাসায় আসবে। 

আব্বু আম্মু আর অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি ওদের চোখে পানি এসে গেছে। হয়তো ভাইয়া থাকলে আমাদের ফ্যামিলিটা আরো সুন্দর হতো। আজকে সব আছে আমার। টাকা আছে, সুখ আছে, ফ্যামিলি আছে, সম্মান আছে কিন্তু নেই শুধু আমার কলিজার ভাইটা। 

যদি আমার জীবনের বিনিময়ে ভাইয়াটা আবার ফিরে আসতো তাহলে হাসতে হাসতে জীবনটা দিয়ে দিতাম। নিজেকে সান্তনা দিতাম আমার ভাই, আমার কলিজা আবার ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। কবর থেকে হয়তো আমার ভাই বলতেছে "জুয়েল কাঁদিস না ভাই, আমাদের আবার দেখা হবে, খুব শীগ্রই দেখা হবে। ইহকালে না হোক পরকালে দেখা হবে। তখন আমরা আবার একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘুরবো। কাটাবো অনেকটা সময় তোর কাছে। বসবো দুজন একসাথে। ভালো থাকবি সব সময় দেখে রাখবি আব্বু আম্মুকে আর সুখে রাখবি আমার মামুনি অনাকে সাথে তোর অবন্তীকে।

ভাই-ভাই সম্পর্কটা থাকবে চিরকাল অটুট হয়ে। 

                  ****** সমাপ্ত ******

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url