প্রেমাতাল - পর্ব 24+25+26 । মৌরি মরিয়ম

প্রেমাতাল

(মৌরি মরিয়ম)

Prematal
This Photo is from Pexels

বাসের লাইট জ্বলে উঠতেই দুজন দুজনকে ছেড়ে যে যার সিটে চলে গেল। বাস কুমিল্লার একটা হোটেলে ২০ মিনিটের ব্রেক দিল। মুগ্ধ বলল,

-"চলো ডিনার করে আসি।"

-"আমি তো ডিনার করেই এসেছি। আমি ৮ টার মধ্যে ডিনার করি।"

-"ডায়েটকন্ট্রোল না?"

-"ডায়েটকন্ট্রোল বলে কথা না। আসলে সবারই রাত ৭/৮ টার মধ্যে ডিনার কম্পলিট করা উচিৎ। নাহলে ক্যালরিটা বার্ন হওয়ারর সু্যোগ পায়না। তুমি খাওনি?"

-"হা হা হা... ৭/৮ টায় আমি নাস্তা করি, ১২ টায় ডিনার। ঘুমানোর আগে না খেলে রাতে ক্ষুধায় আমার ঘুম আসে না।"

তিতির বলল,

-"এটা কিন্তু ভাল অভ্যাস না।"

-"কেন? এত যে খাই আমার কি কোনো ভুরি আছে?"

-"তা নেই।"

প্রেমাতাল - সকল পর্ব

-"নেই আর হবেও না কারন, আমি যেমন অনেক খাই তেমন এক্সারসাইজও করি। না খেলে গায়ে শক্তি হবে কি করে? স্লিম মেদবিহীন থাকার জন্য কম খাওয়াটাকে আমি কখনোই প্রেফার করি না। তাহলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়না, দুর্বল হয়ে যায়।"

-"কিন্তু, আমি নিয়মের বাইরে একটু খেলেই মোটা হয়ে যাব। এপাশ ওপাশ সমান হয়ে ব্যাঙের মত দেখাবে।"

-"কেন এক্সারসাইজ করবে।"

-"এক্সারসাইজটা হয়ে ওঠে না। সকালটা তো ক্লাস করেই কেটে যায়। ক্লাস না থাকলে ঘুম।"

-"তোমার ক্লাস তো থাকে ৯ টায়। তার আগে এক্সারসাইজ করবে।"

-"কিভাবে? ৯ টায় হলেও তো সাড়ে ৮ টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়।"

-"আধা ঘন্টায় রেডি হও আর ব্রেকফাস্ট করা হয়ে যায়?"

-"হ্যা।"

-"এক্ষেত্রে তুমি অনেক ফাস্ট। সো ঢাকা ফিরে আসার পর ইচ্ছেমত খাবে। খালি সুগারটা এভয়েড করার ট্রাই করবে। আর ঘুম থেকে উঠবে সাড়ে ৭ টায়। এক্সারসাইজ করবে সাড়ে আটটা পর্যন্ত। তারপর আধা ঘন্টায় রেডি হয়ে খেয়েদেয়ে ক্লাসে চলে যাবে।"

-"সুগার এমনিতেই এভয়েড করি, পছন্দ না। কিন্তু সাড়ে ৭ টায় ওঠা সম্ভব না। এমনিতেই আমার ঘুম বেশি তার উপর এখন রাতে ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমাতে লেট হয়ে যায়।"

-"তাহলে রাতে বেশিক্ষণ কথা বলব না।"

-"কেন? তোমার কি মনে হয় আমি ডায়েটকন্ট্রোল করে দুর্বল হয়ে গেছি? বান্দরবানে দেখোনি অন্যসব মেয়েদের থেকে আমি কতটা স্ট্রং ছিলাম?"

-"হ্যা হয়তো আছো বাট ডায়েটকন্ট্রোল না করলে আরো স্ট্রং থাকবে। তাছাড়া আমার বাচ্চাগুলোও তো পুষ্টি পাবে না।"

তিতির লজ্জা পেয়ে খামচি দিল মুগ্ধকে। মুগ্ধ বলল,

-"উফ মারছো কেন? যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম রে বাবা।"

-"উফ তুমি চুপ না করলে আমি আরো মারব।"

-"না সত্যিই কিন্তু তোমার ডায়েটকন্ট্রোল করা উচিৎ না।"

-"ডায়েটকন্ট্রোল না করলে মোটা হয়ে যাব।"

-"আরেকটু মোটা তো হওয়াই উচিৎ।"

-"কি বলো তুমি? এই ফিগার বানানোর জন্য সব মেয়েরা হা হুতাশ করে মরে। আর তুমি কিনা মোটা হতে বলছো?"

''প্রেমাতাল'' বই টি রকমারি তে পেয়ে যাবেন

-"তোমার ফিগার ঠিক আছে তবে গায়ে আরেকটু মাংস হলে ভাল হতো। আরো এট্রাক্টিভ লাগত তখন। অন্যদের কথা জানিনা তবে আমার চোখে লাগত। তাছাড়া এখন জড়িয়ে ধরলে গায়ের মধ্যে হাড্ডি ঢুকে যায়। তুমিই বলো আমাকে জড়িয়ে ধরে মজা পাওনা? সেটা তো এই কারনেই যে আমার গায়ের হাড্ডির খোঁচা তোমাকে খেতে হয়না।"

তিতির মুগ্ধর হাতে ইচ্ছেমত খাঁমচাতে লাগলো। মুগ্ধ হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল।তিতিরের হাত ধরে বলল,

-"পরে আরো মেরো। কিন্তু এখন না গেলে তো ব্রেক টাইমটুকু বাসে বসেই কেটে যাবে। চলো তো।"

-"যেতে হবে না দাঁড়াও।"

এই বলে তিতির ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করলো। তারপর সেটা মুগ্ধর হাতে দিয়ে বলল,

-"খাও, আমি নিজের হাতে রেঁধেছি তোমার জন্য।"

-"ওয়াও, হোয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!"

মুগ্ধ বক্সটা খুলতেই দেখলো বিরিয়ানি রান্না করে এনেছে তিতির, সাথে কাবাব। মুগ্ধ ঘ্রাণ শুঁকে বলল,

-"সিরিয়াসলি তুমি রান্না করেছো? এত সুন্দর ঘ্রাণ!"

-"হুম আমি রান্না করেছি। বিরিয়ানি কিন্তু এই প্রথম রান্না করলাম। ঘ্রাণ ভাল হলেও খেতে ভাল নাও হতে পারে। তাড়াহুড়োয় টেস্টও করতে পারিনি।"

মুগ্ধ বক্সটা নিয়ে নিজের সিটে বসলো। তারপর তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,

-"তিতির, বিরিয়ানি আমার অনেক পছন্দ।"

-"জানি তো, সেজন্যই তো বিরিয়ানি রেঁধে আনলাম।"

মুগ্ধ হেসে বক্স্ব রাখা চামচটা দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তিতির আগ্রহে চেয়ে রইলো মুগ্ধ কি বলে সেটা জানার জন্য। কিন্তু মুগ্ধ কিছুই বলছে না শুধু খেয়েই চলেছে। অর্ধেকটা যখন শেষ হলো তখন মুগ্ধ বলল,

-"আহহা! দ্যাত আমি একাই খেয়ে চলেছি। তোমাকে দিচ্ছি না। কি খারাপ আমি। নাও হা করো।"

তিতির হা করলো। মুগ্ধ ওকে খাইয়ে দিল। তিতির খেয়ে বুঝলো বেশ ভালই হয়েছে রান্নাটা। কিন্তু মুগ্ধ কিছু বলছে না কেন? তিতির বলল,

-"খাবাবগুলো খাচ্ছো না যে?"

মুগ্ধ একটা কাবাব তুলে মুখে দিল। তারপর বলল,

-"মাছের কাবাব?"

-"হুম।"

-"বাহ! অস্থির জিনিস তো।"

আরেকটা খেল। তারপর বিরিয়ানি রেখে এক এক করে সবগুলো কাবাব খেল। বলল,

-"এই তিতিরপাখি তুমি একটা নাও।"

-"নাহ তুমি খাও।"

মুগ্ধ জোড় করে একটা খাইয়ে দিল। তারপর বিরিয়ানিটা শেষ হতেই মুগ্ধ বলল,

-"চলো, বাইরে যাই।"

-"কেন?"

-"চা খাব, ওয়াশরুমে যাব।"

তিতির উঠলো। হোটেলে ঢুকে ওয়াশরুমে গেল। ফিরে এসে মুগ্ধকে কোথাও পেলনা। ফোনটাও তো ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় মুগ্ধর কাছে দিয়ে গিয়েছিল। হোটেল থেকে বেড়িয়ে একই কোম্পানির এতগুলো বাস দেখে মাথা ঘুরে যাচ্ছিল কারন ও বুঝতে পারছিল না কোনটা ওদের বাস! এখন কি হবে? আচ্ছা ও কি ওয়াশরুম থেকে এখনো বের হয়নি? তা তো হবার কথা না। তাহলে কি কাউন্টারে গেল কিছু কিনতে? উলটো ঘুরে দৌড় দিতেই মুগ্ধর সাথে ধাক্কা লাগলো। মুগ্ধর হাতে থাকা ওয়ান টাইম কাপের দুই কাপ চা উলটে পড়লো মুগ্ধর শার্টের বুক আর পেটের কাছটাতে। তিতির ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,

-"সরি সরি। আমি খেয়ালই করিনি। পুড়ে গেল বুঝি বুকটা?"

-"পুরে তো সেদিনই গেছে যেদিন ঝাপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরেছিলে কিন্তু দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলে?"

তিতির খানিকটা হাপাচ্ছিল। বলল,

-"আমি তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এদিক ওদিক খুঁজছিলাম। টেনশনেই দৌড় দিয়ে ফেলেছি।"

-"কেন তোমাকে না বলেছিলাম আমি চা নিব? আমি তো তোমাকে দেখেছিলাম বের হতে। আমি ভেবেছি তুমি সামনে থাকবে।"

-"ওহ খেয়াল করিনি বোধহয়।"

-"আচ্ছা আসো আমার সাথে। চা নিয়ে আসি।"

চা নিয়ে আসতে আসতে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেল। বাসে উঠেই চা খেল ওরা। চা খাওয়া শেষ হতেই মুগ্ধ উপর থেকে ওর ব্যাগ টা নামালো। ব্যাগ থেকে একটা শার্ট বের করে পড়নের শার্টটা খুলে ফেলল। তিতির হা করে তাকিয়ে রইলো। মুগ্ধ শার্টটা পড়তে পড়তে বলল,

-"মেয়েদের অনেক সুবিধা বুঝলে? ওরা অনেক ব্যাপারে এক্সট্রা প্রিভিলেজ পায়।"

তিতির বলল,

-"কখনোই না। মেয়েদের কোনো ব্যাপারেই সুবিধা নেই।"

-"আছে আছে। যেমন ধরো আমি চেঞ্জ করছি আর তুমি যে লোভাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছিলে সেই ঘটনাটা যদি উলটো হতো যেমন তুমি চেঞ্জ করছো আর আমি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তাহলে আমি হয়ে যেতাম চরিত্রহীন, লুচ্চা ব্লা ব্লা ব্লা। বাট তোমার কিন্তু কোনোই দোষ হচ্ছে না।"

তিতির অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,

-"সরি। কিন্তু আমার সামনে চেঞ্জ করোনা কক্ষনো। আমার চোখ চলে যায়।"

মুগ্ধ ব্যাগটা আবার উপরে উঠিয়ে রেখে বসলো। তারপর তিতিরের কাছে এসে বলল,

-"সাবধানে থেকো। মাঝেমধ্যে চোখ কিন্তু আমারও চলে যায়। বাধা দিলেও শোনেনা।"

তিতির অবাক হয়ে তাকালো মুগ্ধর দিকে। ওর দুষ্টুমি মাখা হাসি দেখে তিতির খুব লজ্জা পেল। তারপর আর তাকালোই না ওর দিকে। কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ তিতিরের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে আনলো। বুকের মধ্যে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,

-"আমার বউটা যে এত ভাল রান্না করতে পারে আমি তো আগে বুঝিনি।"

তিতির মুখ তুলে চাইল মুগ্ধর দিকে। তারপর বলল,

-"তাই সত্যিই ভাল হয়েছে?"

-"হুম।"

-"আচ্ছা, সারাজীবন যদি আমি তোমাকে মজার মজার রান্না করে খাওয়াই তুমি কি সারাজীবনই আমাকে এভাবে আদর করবে?"

-"হুম, আরো কত কত আদর করবো!"

তিতির চোখ নামিয়ে মুগ্ধর বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে রইলো। মুগ্ধ বাসের সিটের মাথাটা এলিয়ে চোখ বন্ধ করলো কিছুক্ষণের জন্য। ঘুমিয়ে পড়েছিল। তিতিরের দিকে তাকাতেই বুঝলো ও ঘুমন্ত। রাত তখন অনেক। বাসের ম্যক্সিমাম লোকজনই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তিতির যেভাবে বাকা হয়ে আছে পরে তো কোমড়,ঘাড় ব্যাথা করবে। তাই মুগ্ধ ডাকলো,

-"তিতির এই তিতির?"

তিতির মাথা উঠিয়ে সেই ঘুমে জড়ানো মাদকময় কন্ঠে বলল,

-"কি হয়েছে ডাকছো কেন?"

-"এভাবে শুয়ে থাকলে তোমার গা ব্যাথা হয়ে যাবে। একটু এদিকে এসে শোও।"

-"পারব না আমি। দুইটা মেয়েকে তো লিপকিস করেছোই, এখন আর আমার গা ব্যাথার কথা চিন্তা করে কি হবে? মনে যে কত ব্যাথা হয়েছে! সেটা দূর করতে পারবে?"

-"কেন বাবা? ওরা তো আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল তখন। এইযে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়েছো আমি তোমাকে কত আদর করিনা বলো? করতেই হয় রে বাবা। এটা নিয়ে কষ্ট পেওনা প্লিজ।"

-"তার মানে কি তুমি আমাকে যেভাবে আদর করো ওদেরও সেভাবে আদর করেছো?"

-"না, এতটা না। বাট করেছি তো।"

তিতির কান্না করে দিল,

-"অ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা.. তুমি এত এমন, আমি আগে বুঝিনি।"

-"কেমন?"

-"অন্নেক পচা। একদম ভালবাসো না আমাকে।"

মুগ্ধ তিতিরের চোখ মুছে দিয়ে বলল,

-"কেন বাবা? এরকম কেন বলছো? আমি তো তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। তুমি বোঝোনা?"

-"হ্যা বুঝি। খুব ভাল করে বুঝি যে আমাকে ওদের মত অত ভালবাসো না। আমিও তো তোমার গার্লফ্রেন্ড! কখনো আমাকে লিপকিস করেছো?"

-"আমি তো করতে চেয়েছিই। তুমিই পারমিশন দাওনি!"

-"অদ্ভুত তো! আমি লজ্জা পেয়ে না না বলি। তুমি পারমিশনের অপেক্ষা করো কেন? পারমিশন চাইলে কি আমি কখনো বলতে পাড়বো যে, হ্যা আসো আমাকে কিস্সি করো?"

মুগ্ধ খুব ভালভাবে বুঝতে পারছে তিতির এখনো ঘুমের ঘোরে থেকেই এসব বলছে! হয়তো ঘুম থেকে উঠে সবটা ভুলেও যাবে। কিন্তু ওর খারাপ লাগছে। ঘুমের ঘোরে তিতিরের বলা উল্টাপাল্টা কথা শুনে সবসময় ওর হাসি পায়। এখনো পাচ্ছে কিন্তু তারপরেও মনের কোন কোনায় কষ্টও হচ্ছে। কেন যে তিতিরকে সব বলতে গেল! ও তো একটা মেয়ে তার উপর বাচ্চা মানুষ! ওর খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। মুগ্ধকে চুপ থাকতে দেখে তিতির আবার বলল,

-"দেখেছো এখনো কিস্সি করছো না। তুমি তোমার এক্সদেরকেই বেশি ভালবেসেছিলে।"

মুগ্ধ বলল,

-"করবো। এখন তো জানলাম তোমার ইচ্ছে আছে। এখন করবো। তবে আজকে এই বাসের মধ্যে না।"

কান্নার ভাব করে তিতির বলল,

-"কেন?"

-"ছিঃ বাসে কেউ কিস করে? কত মানুষ আছে না?"

-"ওহ তাই তো।"

-"বাসায় গিয়ে। ওকে?"

-"জানি বাসায় গিয়ে তুমি ভুলে যাবে।"

একটু বিরক্ত হয়ে একথা বলে আবার কান্নার ভাব করলো। তারপর মুগ্ধকে অবাক করে দিয়ে তিতির নিজের সিটে দুই পা উঠিয়ে পা ভাজ করে গুটিসুটি মেরে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো মুগ্ধর কোলে মাথা রেখে। মুগ্ধ জাস্ট হা করে চেয়ে রইলো। এটুকু যায়গার মধ্যে এভাবে কি করে ঘুমানো সম্ভব সেটাই বুঝে উঠতে পারছিল না।

তিতির যেভাবে শুয়েছে বাস একটু ব্রেক করলেই পড়ে যাবে। মুগ্ধ দুহাত দিয়ে ওকে নিজের কোলের মধ্যে ধরে রাখলো। সত্যি ঘুমকুমারী নামটা সার্থক! নিজের মনেই হাসলো মুগ্ধ। তিতির একটু আগে যখন ঘুমের ঘোরেই বলেছিল, 'কি হয়েছে ডাকছো কেন?' ইশ তখন ওর ভয়েসটা কি মারাত্মক শোনাচ্ছিল! বুকের মধ্যে লাগছিল একদম। মুগ্ধ তিতিরের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিল। তারপর চেয়ে রইলো ওর মুখের দিকে। কিছুক্ষণ পরেই বাসটা একটা স্পীড ব্রেকার পার হলো। আর বাসটা সামান্য নড়ে উঠলো। তিতির পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু মুগ্ধ ধরে ফেলল। তিতির নড়ে উঠে পাশ ফিরলো। কি অদ্ভুত মেয়ে! এটুকু যায়গার মধ্যে আবার পাশ ফিরছে। হেসে ফেললো মুগ্ধ। কিন্তু তিতির শুধু পাশ ফিরলই না মুগ্ধর কোমড়ও জড়িয়ে ধরলো। এখানেই শেষ নয়, ও মুগ্ধর পেটের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছিল। পেটের মধ্যে গরম নিঃশ্বাস পড়ায় প্রথমে ওর সুড়সুড়ি লাগছিল পরে আস্তে আস্তে সয়ে গেল। বাসের সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু মুগ্ধ এমনিতেই যেখানে বাসে ঘুমাতে পারে না, এই অবস্থায় তো অসম্ভব! এই মুহূর্তটা ও কিছুতেই মিস করতে চায় না।

তিতির ঘুম যখন কিছুটা ভাঙলো, ও বুঝতে পারছিল না ও কোথায়! কিন্তু ঘ্রাণটা খুব চেনা, মুগ্ধ! কিন্তু মুগ্ধ এত রাতে কিভাবে এল? লুকিয়ে লুকিয়ে? কিন্তু সেটা কিভাবে? চম্পা কি দরজা খুলে দিয়েছে? বাবা-মা, ভাইয়া কেউ দেখে ফেলেনি তো! এসব প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এমন সময় বাসটা একটু নড়ে উঠতেই তিতির মনে পড়লো ওরা বাসে করে চিটাগাং যাচ্ছে, ওর হবু শ্বশুরবাড়ীতে। এমা! ও এভাবে মুগ্ধর পেটের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছিল ও? ইশ জেগে উঠলে মুগ্ধ খুব ক্ষ্যাপাবে আর লজ্জা দেবে। তিতির উঠলো না ঘুমের ভান করে পরে রইলো। মুগ্ধর পেটের লোমগুলো শার্টের উপর দিয়েই তিতিরের চোখেমুখে লাগছিল! উফ কি আরাম! মুগ্ধ যদি কয়েকটা বাটন খুলে দিত তাহলে ও এখানে প্রান ভরে চুমু খেত। খুব ইচ্ছে করছে। ওকে কি বলবে? ইশ কখনো বলতে পারবে না ও।

নাহ আর কতক্ষণ এভাবে শুয়ে থাকবে? মুগ্ধর নিশ্চই কষ্ট হচ্ছে। কোল থেকে মাথাটা উঠাতেই ও বলল,

-"মাম, আপনার ঘুম ভাঙলো?"

-"ইশ তোমার কত কষ্ট হলো!"

উঠে যেতে নিল তিতির। মুগ্ধ ওকে উঠতে দিলনা। নিজেই কোল থেকে উঠিয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো তারপর বলল,

-"কষ্ট হয়নি। থাকো এখানে ভাল লাগছে।"

-"তুমি এতক্ষণ একা একা বোর হওনি?"

-"নাহ! একা কোথায় আমার ঘুমকুমারী তো ছিল আমার কাছে। খুব কাছে!"

-"একটা গান শোনাবে?"

-"এখানে?"

-"তাতে কি হয়েছে? এই যেরকম নিচু ভয়েসে কথা বলছি সেরকম ভয়েসেই গাও।"

-"গলা না খুলে গান গাইলে কি সুন্দর হয়?"

-"সুন্দর হওয়া লাগবে না। আমি জানি তুমি ভাল গাও। একদিন খারাপ হলেও ক্ষতি নেই।"

মুগ্ধ গাইতে শুরু করলো,

"তুমি ভরেছ এ মন.....

এক নিঝুম অরন্যে।

বসন্তে পাহাড়চূড়ায় আর বৃষ্টি দিয়ে।

মরুভূমির ঝড়ে আর ঘুমন্ত সাগরে।

তুমি ভরে দাও এ মন ফিরে এসে!

তুমি ভরেছ এ মন.....

এক নিঝুম অরন্যে।

আমায় ভালবাসতে দাও

এ জীবন দিয়ে।

যেন হারাই তোমার মিষ্টি হাসিতে

যেন থাকো সারাক্ষণ এই বাহুডোরে

ফিরে এসো এ জীবনে নতুন করে।

তুমি ভরেছ এ মন.....

এক নিঝুম অরন্যে।"

To be continued....

প্রেমাতাল - পর্ব ২৫

মৌরি মরিয়ম

ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভাঙলো মুগ্ধর। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল টেরই পায়নি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। তিতির ওর বুকের মধ্যে ঘুমাচ্ছে। তিতিরের দিকে চোখ পড়তেই ওর রাতের পাগলামির কথা মনে পড়ে গেল। একা একাই হেসে ফেলল মুগ্ধ। আস্তে আস্তে আকাশটা সাদা হতে লাগলো। বাসে সামনে কয়েকজনের ঘুম ভেঙেছে। ওদের এভাবে কেউ দেখুক আর উল্টোপাল্টা কথা বলুক তা মুগ্ধ চায়না তাই তিতিরকে ঠেলে উঠালো। তিতির বিরক্ত হয়ে বলল,

-"কেন? উফফফফো! আমি উঠতে পারব না।"

-"এভাবে জড়াজড়ি করে ঘুমালে লোকে কি বলবে বলোতো?"

তিতির ঘুমের ঘোরেই বলল,

-"লোক নেই।"

-"আছে সারা বাস ভরতি লোক। উঠো না বাবা। বাসায় গিয়ে আবার ঘুমিও।"

তিতির উঠে গিয়ে নিজের সিটে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর তিতিরকে আবার ডাকলো মুগ্ধ,

-"তিতিরপাখি, ওঠো.. তোমার শ্বশুরবাড়ি চলে এসেছি।"

তিতির ঘুমের ঘোরে মাথা উঁচু করে বলল,

-"কোথায়?"

-"ওইযে দেখো চিটাগাং গেট চলে এসেছি। আর কিছুক্ষণ পরই নামব। ততক্ষণে তুমি তোমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, চোখেমুখে পানি লাগিয়ে ঘুম কাটাও।"

-"ধুর, লাগবেনা। চলোতো তাড়াতাড়ি বাসায় যাই।"

মুগ্ধ হেসে ফেলল। সারারাত ঘুমিয়েও ঘুম কাটেনা। কি অদ্ভুত!

বাস থেকে নেমে মুগ্ধ যখন সিএনজি ঠিক করছে, তিতির তখন বোতলের পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিল। সিএনজিতে উঠেই তিতির বলল,

-"এই আমার নার্ভাস লাগছে।"

-"কেন?"

-"প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি! নার্ভাস লাগবে না?"

মুগ্ধ তিতিরের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,

-"যদি গিয়ে দেখো বাসায় কেউ নেই।"

-"মানে?"

-"মানে যদি গিয়ে দেখো, বাসায় কেউ নেই শুধু তুমি আর আমি?"

-"অপেক্ষা করবো। কেউ নেই তো কি হয়েছে? চলে আসবে।"

-"আর যদি না আসে?"

তিতির বিরক্ত হয়ে বলল,

-"রহস্য করবে না তো, অসহ্য। এমনিতেই নার্ভাস লাগছে তার উপর উনি আসছে ওনার রহস্যের ঝুলি নিয়ে।"

মুগ্ধ কিছু বলল না। একা একা হাসতে লাগলো। মুগ্ধর হাসি দেখে তিতিরের গা জ্বলে যাচ্ছিল।

সিএনজি কয়েকবার ডানে বায়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বামে মোড় নিয়ে যেখানে থামলো যায়গাটা শহরের বাইরে। তার ডানপাশে ছিল একটা চা বাগান। বামপাশে একটা রাস্তা উপরের দিকে উঠে গেছে। তিতির বলল,

-"যায়গাটা অসাধারণ।"

তিতির নিজের ব্যাগটা উঠাতে যাচ্ছিল। মুগ্ধ বলল,

-"আমাকে দাও।"

-"আমি পারব।"

-"যখন নিজের ব্যাগ টেনেছ তখন তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলে না। আমিও কিছু বলিনি। কিন্তু এখন তো আমি তোমাকে ব্যাগ টানতে দেব না। থার্ড, ফোরথ বাচ্চাদের টানার জন্য শক্তি সঞ্চয় কিরে রাখো।"

তিতির আর কিছু বলল না। এই পাগলের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। মুগ্ধ তেমন কিছুই আনেনি। ছোট্ট একটা ব্যাগ কাধে। তিতিরের ব্যাগটাও সেটার উপরে নিয়ে নিল। ওই রাস্তায় উঠতেই তিতির বলল,

-"এত উঁচু কেন রাস্তাটা? আর সিএনজিটা ছাড়লে কেন? কতদূর হাটতে হবে? হটছিই বা কেন? এদিক দিয়েই কি তোমার বাসায় যেতে হয়?"

-"এতগুলো প্রশ্ন?"

-"থাক বলতে হবে না।"

একথা বলেই তিতির আবার হাটা ধরলো। মুগ্ধ তিতিরের একটা হাত ধরে বলল,

-"আরে রাগ করছো কেন?"

তিতির থামছিল না। মুগ্ধ হঠাৎ তিতিরকে কোলে তুলে নিল। তিতিরের রাগ উধাও। তারপর হাটতে হাটতে মুগ্ধ বলল,

-"রাস্তাটা এত উঁচু কারন আমরা একটা টিলার উপর উঠছি।"

-"টিলা মানে জানি কি? টিলা, ঢিবি এগুলো আমি বুঝিনা।"

-"ঢিবি বলে সামান্য উঁচু যায়গাকে। টিলা বলে ছোট পাহড়কে। মাঝারি গুলো মেইনলি পাহাড়। আর নিলগিরি টাইপ উঁচুগুলোকে বলে পর্বত। তোমার দেখি বাংলা ভোকাবোলারিতে ব্যাপক সমস্যা! আমার বাচ্চাগুলোকে কি শিখাবে?"

তিতির একটা চিমটি দিল মুগ্ধকে। তারপর বলল,

-"তোমার বাচ্চাদের তুমি শিখাবে। আমার অত দায় পড়েনি।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"কতকিছুর দায় যে পড়বে এখন কি বুঝবে সুন্দরী?"

তিতির বলল,

-"মানে?"

-"মানে কিছু না, আগে তোমার আগের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নিই। সিএনজি ছেড়ে দিয়েছি কারন এখানকার সিএনজি বান্দরবানের মত তেলে চলে না। গ্যাসে চলে, যদিও প্রব্লেম হয়না তবু এটুকুর জন্য আমি রিস্ক নিতে চাইনা। বেশি হাটতে হবে না, আর সামান্য একটু। আর হ্যা, এদিক দিয়েই আমার বাসায় যেতে হবে। এই টিলার উপরেই আমার বাসা।"

-"সিরিয়াসলি? এত সুন্দর যায়গায় তোমার বাসা?"

-"তো? প্রকৃতিপ্রেম কি এমনি এমনি হয়েছে?"

-"ওয়াও। যায়গাটা অনেক সুন্দর।"

-"সুন্দরের দেখেছো কি? আগে উপরে উঠি?"

উপরে উঠে মুগ্ধ যেখানে তিতিরকে কোল থেকে নামালো তার সামনেই একটা গেট। গেটটা লাগানো। মুগ্ধ কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বলল,

-"পাঁচ মিনিট ওয়েট করো।"

তারপর গেট বেয়ে তড়তড় করে উপরে উঠে ওপাশে চলে গেল। ভেতর থেকে লাগানো গেটটা খুলে বলল,

-"আসুন বেগাম। শ্বশুরবাড়িতে আপনাকে সুস্বাগতম!"

তিতির হেসে ব্যাগগুলো উঠাতে যাচ্ছিল। মুগ্ধ বলল,

-"অপরাধ মার্জনা করবেন বেগাম! ওগুলো আনার জন্য এই বান্দা এখনো জীবিত রয়েছে, আপনি আপনার স্বর্ণপদযুগল রেখে এই বাড়িটিকে ধন্য করুন।"

তিতির হাসিমুখে ভেতরে ঢুকলো। ও খুব এক্সাইটেড। মুগ্ধ বেড়িয়ে ব্যাগগুলো নিয়ে আসলো। তারপর বলল,

-"চলো।"

গেটের ভেতর লম্বা একটা রাস্তা। দুইপাশে অসংখ্য গাছ, সব চেনেও না তিতির। রাস্তাটা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে ছোট্ট একটা দোতলা বাসা। বিল্ডিং এর কাছাকাছি দুটো গাছের মাঝে একটা হ্যামক ঝোলানো। অপজিটের একটা গাছের ডালে দড়িতে কাঠ বেধে একটা দোলনা বানানো হয়েছে। ছাদে একটা কবুতরের বাসাও দেখা যাচ্ছে। গেটের দুপাশের লাইট, বাউন্ডারি, হ্যামক, দোলনা, কবুতরের বাসা সব মিলিয়ে তিতির বুঝলো এসবই কোন সৌখিন মানুষের কাজ! কে হতে পারে? মা, বাবা, স্নিগ্ধ, পিউ নাকি মুগ্ধ? যেই হোক সবকিছু এত ভাল লাগলো যে ওর এখানেই স্থায়ী হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। মুগ্ধকে বলতে হবে তবে এখন না পরে। তিতির হাটতে হাটতে বলল,

-"এটা তোমাদের নিজেদের বাসা?"

-"হ্যা, দাদা বানিয়েছিল। সামনে যে চা বাগান টা দেখেছো ওখানে দাদা চাকরি করতো। তখনই এই টিলাটা কিনে বাসা বানায়। প্রথমে এটা কাঠের ঘর ছিল। আস্তে আস্তে বিল্ডিং হয়েছে বাট আই মিস দ্যাট উডেন হাউজ।"

-"কিন্তু তুমি যে বলেছিলে তোমাদের বাড়ি চিটাগাং এ না। বাবা চাকরীর জন্য থাকে?"

-"হ্যা, আমাদের বাড়ি তো কুমিল্লা। দাদা এখানে চাকরী করতো, বাসা বানিয়েছে। আস্তে আস্তে সবাই চলে এসেছে তা বলে তো আমরা চিটাগাং এর হয়ে গেলাম না। তাই না?"

-"ও। দাদা এখন কোথায় থাকে?"

-"দাদা-দাদী কেউই বেঁচে নেই এখন।"

-"সরি।"

-"হুম এসো। আর শোনো মাকে পা ধরে সালাম করতে আপত্তি নেই তো? মানে জানি কারো পা ধরে সালাম করতে নেই কিন্তু মা খুব খুশি হবে।"

-"না না আপত্তি কিসের? আমি করবো।"

মুগ্ধ বেল বাজালো। তিতিরের প্রচন্ড নার্ভাস লাগছিল। একটা ১৩/১৪ বছরের ছেলে বেড়িয়ে এল। বলল,

-"কাকে চাই?"

মুগ্ধ বলল,

-"মেহতাব চৌধুরী আছেন?"

-"না, উনি একটা অপারেশনে গেছেন। কোন মেসেজ থাকলে আমাকে দিয়ে যেতে পারেন।"

তিতির বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে। মুগ্ধ বলল,

-"ওহ। আমরা কি একটু ভেতরে আসতে পারি? আসলে আমরা খুবই টায়ার্ড।"

-"আপনার পরিচয়?"

-"আমি মেহবুব চৌধুরী। মেহতাব চৌধুরীর একমাত্র বড় ছেলে।"

-"ওহ! আর ওই সুন্দরী কিশোরীটি কে? ওনার পরিচয় তো দিলেন না?"

-"আপনি মেহদিন চৌধুরীকে চেনেন? মেহতাব চৌধুরীর একমাত্র ছোট ছেলে।"

-"জ্বী চিনি।"

-"ওই কিশোরীটি তার বড় ভাবী।"

ছেলেটা দুই কদম সামনে এসে চোখদুটো বড় বড় করে বলল,

-"ভাইয়া তুমি বিয়ে করে ফেলেছো? আম্মু যে বলল গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসছো? একা একা কেন বিয়ে করলে? আমরা কি বাধা দিতাম?"

এতক্ষণে মুগ্ধর মা আর পিউ চলে এল। মা তিতিরের কাছে এসে ওর মুখটা ধরে বলল,

-"মাশাল্লাহ! চোখদুটো যেন ধন্য হয়ে গেল। কি মিষ্টি দেখতে তুমি মা।"

তিতির লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। তারপর পা ছুঁয়ে সালাম করলো। মা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-"কী লক্ষী মেয়ে গো।"

স্নিগ্ধ বলল,

-"মিষ্টি আর লক্ষী হলে কি হবে? দেখে তো মনে হচ্ছে আমার চেয়েও ছোট।"

মুগ্ধ সব দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিল। পিউ স্নিগ্ধকে একটা ধমক দিয়ে তিতিরের কাছে এসে বলল,

-"আপু ভেতরে এসো তো। পাগলদের পাগলামি চলতেই থাকবে। তোমরা যে এতটা পথ জার্নি করে এসেছো সে খেয়াল কারোর নেই।"

মা বলল,

-"ওহো তাই তো। তোমাকে দেখে সব ভুলে গেছি। ভেতরে এসো মা, ভেতরে এসো।"

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে তিতির একবার মুগ্ধর দিকে তাকালো। মুগ্ধ ওকে চোখ মেরে দিল। এর অর্থ কি ছিল কে জানে! ভেতরে ঢুকে পিউ তিতিরকে ওর ঘরে নিয়ে গেল। বলল,

-"শোনো এখনি তো ভাইয়ার ঘরে থাকার পারমিশন পাবে না। তাই আমার ঘরেই থাকতে হবে। আর আমি কিন্তু আপু টাপু বলতে পারবো না। এখন থেকেই ভাবী বলবো আপত্তি নেই তো?"

-"নাহ। তোমার যা ইচ্ছে তুমি বলো।"

-"আচ্ছা, আর অনেক গল্প হবে আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।"

তিতির ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো মা বসে আছে। ওর এখন আর একটুও নার্ভাস লাগছে না, শুধু লজ্জা লাগছে। মা বলল,

-"চলো চলো নাস্তা করবে। সবাই তোমার জন্য বসে আছে।"

সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে অপেক্ষা করছিল। তিতির রুমে ঢুকতেই মুগ্ধ ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তিতির জানে কেন! তিতিরের চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এই দৃশ্য অনেক দিন পর দেখছে মুগ্ধ। পাগল একটা।

মুগ্ধ সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালো। কারন তিতিরকে ও ভাগে পেলনা। সকালে স্নিগ্ধ কতক্ষণ পাগলামি করে স্কুলে চলে গেল। তারপর সারাটাক্ষণ মা আর পিউ মিলে ওর সাথে গল্প করলো, ম্যাক্সিমাম মুগ্ধর ব্যাপারে। মুগ্ধ কি পছন্দ করে কি অপছন্দ করে এসবই। খুব ভাল লাগছিল তিতিরের। পিউ ঘুরে ঘুরে পুরো বাসাটা ওকে দেখালো। তারপর মা যখন রান্না করতে চলে গেলে পিউ ফিসফিস করে বলল,

-"এবার ভাইয়ার কাছে একটু যাও। নাহলে বোধহয় পাগল হয়ে যাবে। বেচারার চেহারা দেখে আমি তো অবাক। কখনো কোনো মেয়ের জন্য আমি ওর এমন ফিলিং দেখিনি জানো?"

তিতির লজ্জা পেয়ে হাসলো। পিউ বলল,

-"আরে আমার কাছে লজ্জা কি? যাও না। ভাইয়া সেই সকাল থেকেই একা একা তোমার দুক্ষে নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছে। যদি তোমাকে একটু না ছাড়ি তাহলে হয়তো তোমাকে আর আমাদের কাছে আনবেই না।"

-"ও না আনলেও আমি আসব। এত আদর বুঝি আমি নেব না?"

পিউ তিতিরকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল,

-"ভাবী তুমি অনেক ভাল। তোমাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।"

তিতির পিউএর গাল ধরে বলল,

-"আর তুমিও এত্ত কিউট যে খালি আদর করতে ইচ্ছে করে।"

-"আচ্ছা আচ্ছা, এবার ভাইয়ার কাছে একটু যাও। আমার ভাইয়াটাও কিন্তু অনেক কিউট।"

তিতির মুগ্ধর ঘরে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিল। মুগ্ধ খালি গায়ে ঘুমাচ্ছে। তিতির ওর পাশে বসলো। খুব ইচ্ছে করছিল ওর বুকে হাত রাখতে। কিছু না ভেবেই তিতির মুগ্ধর বুকে হাত রাখলো। এই প্রথম বোধহয় ওর যা ইচ্ছে হলো তাই করলো। মুগ্ধর ঘুম ভেঙে গেল কিন্তু তিতিরের স্পর্শ বুঝতে পেরে ঘুমের ভান করে রইলো। তিতিরের খুব ইচ্ছে করছে মুগ্ধর বুকে একটা চুমু দিতে। কিন্তু মুগ্ধ যদি জেগে যায়? ওর যা পাতলা ঘুম! জেগে গেলে যাবে। তিতির মুগ্ধর বুকে একটা চুমু দিয়ে উঠতে নিয়ে আর উঠতে পারলো না। মুগ্ধ ওকে জড়িয়ে ধরেছে। তিতির বলল,

-"ছাড়ো। কেউ এসে পড়বে।"

-"আসুক! তো কি হয়েছে? মুগ্ধ কাউকে ভয় পায় নাকি?"

-"তুমি ভয় না পেলেও আমি পাই, ছাড়ো।"

-"আরে এত ছটফট করছো কেন? শোনো না।"

-"কি?"

-"তুমি এটা কেন করলে?"

-"কোনটা?"

-"এইযে আমার বুকে হাত রাখলে, চুমু দিলে।"

তিতিরের মাথাটা মুগ্ধর বুকের উপর ছিল। তিতির মুগ্ধর বুকে জোড়ে একটা কামড় দিয়ে বলল,

-"ঘুমের ভান করে ছিলে? ছিঃ তুমি একটা খুব খারাপ।"

-"ভাল হয়েছে, আমি খারাপই। আর তাই এখন তুমি যেটা করেছো সেটা আমিও করবো।"

-"কোনটা? কি করবে?"

-"তুমি কি করেছো সেটা তুমিই চিন্তা করো। ঠিক সেটাই করবো। আমি নিজের মুখে বললে তো আবার রাগ করবে।"

তিতির লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছিল। কি করবে এখন? মুগ্ধর হাতে কামড় দিল। মুগ্ধ এটার জন্য রেডি ছিল না। তাই হাত আলগা হতেই তিতির উঠে দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হতে নিল। কিন্তু তার আগেই মুগ্ধ দৌড়ে ধরে ফেলল ওকে। তিতির বলল,

-"ছেড়ে দাও। মাফ চাই এরকম আর করবো না।"

মুগ্ধ পেছন থেকে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে একটা চুমু দিতেই ও লাফিয়ে উঠলো। নিজেকে প্রাণপনে ছাড়াতে চাইলো মুগ্ধর হাত থেকে। মুগ্ধ ওর হাত আলগা করে দিল তিতির কি করে দেখার জন্য। তিতির নিজেকে কোনরকমে ছাড়িয়ে এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। ব্যাপারটা কি হলো? মুগ্ধ বুঝতে পারলো না। অবাক হয়ে চেয়ে রইল তিতিরের চলে যাওয়া পথের দিকে। তিতিরের গায়ের ধাক্কায় দরজাটা এখনো নড়ছে।

To be continued...

প্রেমাতাল - পর্ব ২৬

মৌরি মরিয়ম

মুগ্ধ হিসাব মেলাতে পারছিল না। কাল রাতে তিতির ঘুমের ঘোরে বলেছে মুগ্ধ কেন ওকে আদর করেনা! এখন আবার আদর করতে যেতেই এরকম করলো যেন ও চাচ্ছেই না। অল্পবয়সী মেয়েদের সাথে প্রেমে এই এক ঝামেলা বটে! তারা কখন যে কি চায় বোঝা বড় দায়। কিন্তু তিতির আজ যেভাবে চলে গেল তাতে ও কিছুটা অপমানিত বোধ করছে। ওর নিজের উপর যে পরিমাণ কন্ট্রোল আছে তাতে ও তিতিরকে বছরের পর বছর একফোঁটা না ছুঁয়েও থাকতে পারবে।

লাঞ্চ টাইমে আবার দেখা হলো তিতিরের সাথে। কিছুই বলল না মুগ্ধ। চুপচাপ খেয়ে উঠে গেল। উঠে বেসিনে হাত ধুচ্ছে এমন সময় মা বলল,

-"মুগ্ধ তিতিরকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে আয় না।"

-"কোথায়?"

-"ওম্মা! এদিকে যা যা ঘোরার মত যায়গা আছে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। পতেঙ্গাও তো যেতে পারিস।"

-"পতেঙ্গা যাওয়ার সময় কোথায়? এখন তো ৩ টা বেজেই গেছে।"

তিতির চিন্তায় পড়ে গেল। মুগ্ধ এভাবে বলছে কেন? রাগ করেছে নাকি? কিন্তু রাগ কেন করবে? বুকে কিস করতে না চাইলে কি ওভাবে বের হয়ে যেত ঘর থেকে? আচ্ছা মুগ্ধ কি সত্যিই করতো? নাকি ওকে লজ্জা দেয়ার জন্য বলেছিল? মুগ্ধ তো মজা করে কত কিছুই বলে! তারপরও, বললেও এভাবে প্রিপারেশন নিয়ে ধরে তো না কখনোও। ইশ কেন যে মুগ্ধর বুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ওভাবে কিস করতে গিয়েছিল! খুব ভুল হয়েছে। কিন্তু ও কিইবা করবে? মুগ্ধকে যে ওর কতরকমভাবে আদর করতে ইচ্ছে করে তা তো ও কোনোদিনও উচ্চারনও করতে পারবে না।

মা বলল,

-"তাহলে আশেপাশে ঘুরিয়ে আন। বেচারি বাসায় বসে বোর হচ্ছে না?"

মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,

-"তুমি বাসায় বোর হচ্ছো?"

তিতির বলল,

-"না, পিউ আর আন্টির সাথে ছিলাম সারাদিন, একটুও বোর হইনি।"

-"ওকে।"

মুগ্ধ নিজের ঘরে চলে গেল। মনে হলো এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে রাগ করে কি হবে? ও তো রাগটা বুঝেই না। সে যাই হোক, ওর আসলে কি হয়েছিল? ও কি রাগ করেছিল? নাকি লজ্জা পেয়েছিল? লজ্জা তো সবসময়ই পায় কিন্তু এভাবে রিফিউজড কখনো, কিছুতে করেনা।

মুগ্ধ ঘরে ঢোকার পর মা তিতিরকে জিজ্ঞেস করলো,

-"ওর আবার কি হলো? রাগ করেছে কেন? ঝগড়া হয়েছে তোমাদের?"

-"না তো!"

-"ঝগড়া না হলেও কোন কারনে রেগে আছে।"

-"কি করে বুঝলেন আন্টি?"

-"আরে, আমার ছেলের সব বিহেভিয়ার আমার মুখস্থ। খুব বুঝতে পারছি তোমর উপরেই কোন কারনে রাগ করেছে। আর তুমি জানোই না?"

-"ও আমার সাথে কখনোই রাগ করেনি, তাই বুঝতে পারছি না।"

পিউ বলল,

-"ভাবী, ভাইয়া আসলেই রাগ করেছে। তুমি দেখো গিয়ে কি হয়েছে!"

ওদের কথার মাঝেই মুগ্ধ শার্ট পড়তে পড়তে নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,

-"মা, বাবা কি বাইকটা নিয়ে বেড়িয়েছে?"

-"না, তোর বাবা তো ঢাকা গেছে কাল, অফিসের গাড়িতে গেছে। বাইক গ্যারেজেই আছে। তুই চিন্তা করিস না, তোর বাবা কালই চলে আসবে। তিতিরের সাথে দেখা হবে।"

-"ওহ। আচ্ছা বাইকের চাবিটা দাও।"

-"ও তোরা বেরোবি? আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।"

-"তোরা না, আমি একা বের হব। শহরে যাব, কাজ আছে।"

-"তুই তিতিরকে একা রেখে বের হবি?"

-"একা কোথায়? তোমরা আছ তো।"

-"একটা থাপ্পড় মারবো, ওকে নিয়ে যা।"

মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,

-"তুমি আসলেই যাবে? গেলে রেডি হয়ে আসো। আর আমি কিন্তু আজকে ঘোরাতে পারবো না। আমি কাজে যাচ্ছি।"

তিতিরের তবু যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি বলবে! ওকে বলতে হলো না। মা বলল,

-"যাবে না কেন? ছোট মানুষ বাসায় বসে থাকবে নাকি সারাক্ষণ? তোর কাজ তুই করবি ও তোর সাথে থাকবে। বাইকে করে যাবে আসবে এতেই তো ঘোরা হবে।"

তারপর তিতিরের দিকে ফিরে বলল,

-"মা যাও রেডি হয়ে নাও।"

তিতির বলল,

-"পিউ তুমিও চলো।"

পিউ বলল,

-"না না আমি যাব না। আমার কাজ আছে। তোমরা যাও।"

তিতির পিউএর রুমে গেল। ৫ মিনিটের মধ্যেই মুখটা ধুয়ে, ড্রেস চেঞ্জ করে চুলগুলো একটা ঝুটি করে বেড়িয়ে এল। মা চাবি এনে মুগ্ধর হাতে দিতে দিতে তিতিরের দিকে চেয়ে বলল,

-"ওমা এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল?"

তিতির হাসলো। মুগ্ধ বলল,

-"তোমার কি মনে হয় মা তোমার ছেলে অর্ডিনারি কাউকে বিয়ে করতে চলেছে? তিতির ঠিক তেমন যেমনটা তোমার ছেলের জন্য দরকার।"

একথা বলেই মুগ্ধ বের হল। মা তিতিরের কাছে এসে বলল,

-"অতটাও রাগ করেনি। যাও যাও। দাঁড়িয়ে আছে তোমার জন্য।"

তিতির লজ্জা পেয়ে বেড়িয়ে গেল। বাইকে উঠে বসে মুগ্ধর কাধে হা রেখে পিছনে ফিরতেই পিউ, মা হাত তুলে টা টা দিল। তিতিরও টাটা দিল। ওরা যখন টিলার উপর থেকে যখন নামছিল স্নিগ্ধ স্কুল থেকে ফিরছিল। ওদের বাইকে দেখতে পেয়েই দু'অাঙুল মুখে দিয়ে একটা সিটি বাজালো। মুগ্ধ থামলো না। যেতে যেতেই জোরে জোরে বলল,

-"কানের নিচে একটা দিব ফিরে এসে।"

স্নিগ্ধ চিৎকার করে বলল,

-"ভাবী বাঁচাবে।"

ততক্ষণে মুগ্ধ অনেকদূর চলে গেছে। তাই আর উওর দিল না। তিতির বলল,

-"ও অনেক দুষ্টু না?"

-"হুম, মারাত্মক।"

মুগ্ধ তিতিরকে জিজ্ঞেস করল,

-"পতেঙ্গা রোডে বাইকরাইডে যাবে?"

তিতির মুগ্ধকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠের উপর মাথা রেখে বলল,

-"তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখেই যাব।"

-"যদি জাহান্নামে নিয়ে যাই?"

-"যাব।"

মুগ্ধ তিতিরকে পতেঙ্গা রোডে নিয়ে স্পিড বাড়িয়ে দিল। উন্মত্ত বাতাস যেন ওদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। দুইপাশে গাছ, মাঝখানে পিচঢালা রাস্তা। সমুদ্রের ঠেউএর শব্দ! আহ, আনন্দ রাখার যায়গা পাচ্ছে না তিতির। অথচ আসার আগে বলছিল ঘোরাতে পারবে না।

এরপর সন্ধ্যা নেমে এলে মুগ্ধ ওকে নিয়ে নাভাল রোডে চলে গেল কাঁকড়া খেতে। তিতির বলল,

-"তোমার না কাজ আছে? এখানে এলে যে?"

-"হ্যা, ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করার কাজ। ওদের বলে দিয়েছি, ওরা এখানেই আসবে।"

-"ও।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এল গরম গরম মশলা দিয়ে লাল করে ভাজা কাঁকড়া। মুখে দিয়েই তিতির বলল,

-"এত মজার কাঁকড়া আমি কোনদিনও খাইনি।"

-"হুম জানি তো। কুয়াকাটার লেবুবনের কাঁকড়া আরো মজা।"

-"আমি যাব।"

-"হুম, অবশ্যই নিয়ে যাব কোনো একদিন। ওখানে কাঁকড়া ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে।"

-"কি আছে?"

-"ওখান থেকে সূর্যাস্ত, সূর্যদোয় দুটোই ভাল দেখা যায়। একটা জাতীয় উদ্যান আছে যেখানে অসংখ্য গাছ আর বিভিন্নরকম পাখি দেখা যায়, পাশেই সমুদ্র। যায়গাটা খুবই শান্তির। লাল কাঁকড়ার দ্বীপও আছে একটা। লেবুবনের ওইদিকটাও অনেক সুন্দর। একপাশে সমুদ্র আরেকপাশে বালুতে জন্মানো গাছ। অসাধারণ।"

-"আর বোলোনা, আমার এখনি যেতে ইচ্ছে করছে।"

-"আচ্ছা যাও আর বলব না।"

তিতির হঠাৎ মুগ্ধর একটা হাত ধরে বলল,

-"তোমার বাসার সবাই এত ভাল কেন?"

-"সবার সাথে এমন ভাল না। তোমাকে পছন্দ হয়েছে তাই তোমার সাথে এত ভাল।"

-"সত্যি?"

-"হুম সত্যি। আচ্ছা তুমি বাসায় কয়দিনের কথা বলে এসেছো?"

-"৫ দিন।"

-"কিন্তু আমার ছুটি তো তিনদিন। একদিন আজ চলেও গেল।"

-"হুম জানি তো। তবু আমি এক্সট্রা টাইম নিয়ে এসেছি। আগে চলে গেলে তো আর প্রব্লেম নেই।"

-"ও। আচ্ছা তোমার এক্সট্রা টাইমের কথা শুনে একটা আইডিয়া এল মাথায়।"

-"কি?"

-"তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে চলো যাওয়ার সময় একটা দিন বান্দরবানে ঘুরে আসি। আমাদের বাসা থেকে ১ ঘন্টাও লাগে না যেতে। ধরো সকালে বের হলাম সারাদিন ঘুরে রাত্রের বাসে ঢাকা চলে গেলাম। বান্দরবান সিটিতেই ঘুরাঘুরি করবো। আমার কিছু পছন্দের যায়গা আছে, তোমাকে সেসব যায়গায় নিয়ে যাব।"

-"ইটস আ গ্রেট আইডিয়া। কিন্তু তোমার তো ছুটি নেই।"

-"আমি তো আর ছুটি নিয়ে আসিনি। আজ সরকারি ছুটি ছিল। কাল-পরশু শুক্রবার-শনিবার। অফিসে বলিওনি বাড়ি আসব। তুমি যদি বান্দরবান যাও তো তখন ছুটি নিয়ে নেব।"

-"আমি যাব প্লিজ।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"আচ্ছা ঠিক আছে।"

কিছুক্ষণ পর মুগ্ধর ফ্রেন্ডরা এল। মুগ্ধ তিতিরকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অনেক আড্ডা হলো তারপর ফিরে এল বাসায়। রাতে সবার সাথে গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল। অবশেষে ১ টার দিকে যে যার মত ঘুমাতে গেল। বিছানায় শুয়েই আছে শুধু ঘুম আসছে না। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো মুগ্ধর। ওপাশ থেকে তিতিরের গলা,

-"হ্যালো.."

-"হুম বলো।"

-"কি করছো?"

-"শুয়ে আছি।"

-"শুয়ে শুয়ে কি করছো?"

-"করার মানুষ তো এখানে নেই। পিউএর ঘরে।"

তিতির মুচকি হেসে বলল,

-"জানো,ঘুম আসছে না আমার!"

-"জীবনেও বিশ্বাস করিনা। বাসের মধ্যেই যেভাবে ঘুমিয়েছো আর এখানে বিছানায়ও তোমার ঘুম আসছে না?"

-"তখন তো তুমি পাশে ছিলে।"

-"তো?"

-"তুমি পশে থাকলে এত শান্তি লাগে। তোমার ছোঁয়া পেলে আবেশে ঘুম চলে আসে।"

-"হুম সেজন্যই তো দুপুরবেলা ওরকম করলে!"

-"ইশ, সরি।"

-"আচ্ছা এত কাছে থেকেও ফোনে কথা বলার কোনো মানে হয়না। চলো ছাদে যাই। বের হও রুম থেকে। বাই দ্যা ওয়ে পিউ কি জেগে?"

-"নাহ ও ঘুমিয়ে পড়েছে।"

-"আচ্ছা দেন বের হও। ছাদে যাই।"

তিতির বেরিয়ে এল। মুগ্ধ ওর হাত ধরে ছাদে চলে গেল। মুগ্ধ আকাশের চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে বলল,

-"দেখেছো আমাদের একসাথের সব মুহূর্তগুলোতে চাঁদ আমাদের সাথে।"

-"হুম! আমরা লাকি।"

মুগ্ধ সিঁড়িরুমের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তিতিরকে বুকে টেনে নিল। তারপর বলল,

-"এবার বলোতো দুপুরে ওরকম করলে কেন?"

-"সরি, আমার আসলে খুব লজ্জা লাগছিল, তুমি যা বলছিলে! ছিঃ আর ভয় করছিল যদি কেউ চলে আসে।"

-"এখন ভয় করছে না?"

-"নাহ! এখন তো রাত।"

-"তার মানে কি রাতে তোমার সাথে যা করতে চাইব তাইই করতে দিবে?"

-"ইশ! কক্ষনো না।"

একথা বলেই তিতির সরে যেতে চাইলো। মুগ্ধ বলল,

-"খুব শক্ত করে ধরেছি, আমি নিজে না ছাড়লে ছাড়াতে পারবে না।"

তিতির মুগ্ধর বুকে কামড় দিল। মুগ্ধ ব্যাথা পেলেও ছাড়লো না। বলল,

-"তোমার যত অত্যাচার আর যত ভালবাসা সব আমার বুকের উপর কেন? আমি কি কখনো তোমার..."

কথা শেষ করতে দিলনা তিতির। একটা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল। মুগ্ধ ওর সেই হাতে চুমু খেল।

তিতির বলল,

-"প্লিজ, একটু সামলে কথা বলো। তোমার কিছু কিছু কথায় আমার খুব বেশি লজ্জা লাগে।"

মুগ্ধ ওর হাতটা সরিয়ে দুহাতে তিতিরের মুখটা ধরে বলল,

-"তোমার লজ্জামাখা মুখটা দেখতেও তো আমার খুব বেশি ভাল লাগে।"

তিতির একথায়ও চোখ নামিয়ে নিল। চাঁদের আলো পড়ে কি মায়াবী দেখাচ্ছে তিতিরকে! মুগ্ধ চোখ ফেরাতে পারছিল না। নিচু হয়ে তিতিরের ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিতেই তিতির আবার হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো। বলল,

-"না, প্লিজ!"

মুগ্ধ তিতিরকে ছেড়ে দিল। কিন্তু তিতির চলে গেল না। দাঁড়িয়ে রইলো। মুগ্ধ পকেটে হাত গুজে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। তিতিরের মনে হলো মুগ্ধ আবার রাগ করেছে। কিন্তু মুগ্ধ তখন রাগ করেনি, নিজেকে সামলে নিচ্ছিল। তিতির মুগ্ধর কাছে এসে বলল,

-"রাগ করো না প্লিজ। আমার কেমন জানি লাগে। কখনো করিনি তো।"

বলতে বলতেই তিতির কান্না করে দিল। মুগ্ধ অবাক। তিতির আর দাঁড়ালো না, হাঁটা শুরু করলো নিচে যাওয়ার জন্য। মুগ্ধ দৌড়ে ওকে ধরে ফেলল,

-"এই পাগলী কি হচ্ছেটা কি? আমি রাগ করেছি কে বলল? তুমি যতদিন না চাইবে আমি কিছুই করবো না। কান্না থামাও।"

-"আমি তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ডদের মত স্মার্ট নই।"

-"শোনো কাল রাতে তুমিই কান্না করতে করতে বলেছিলে আমি আমার এক্সদের কিস করেছি কিন্তু তোমাকে করিনি। তার মানে আমি ওদের তোমার থেকে বেশি ভালবেসেছিলাম। কেমন লাগে এসব কথা শুনতে?"

-"ইশ, জীবনেও আমি এসব বলিনি।"

-"বলেছ বাবা। আরো অনেক কিছু বলেছো"

-"কি বলেছি?"

মুগ্ধ সবটা বলল। তিতির সব অস্বীকার করে মুগ্ধর হাত ছেড়ে নিচে চলে যেতে নিল। মুগ্ধ আবার ওর হাত ধরে থামিয়ে গান শুরু করে দিল। মান্না দে'র সেই বিখ্যাত গানটা,

"সুন্দরী গো দোহাই দোহাই মান করোনা

আজ নিশীথে থাকো কাছে

না বোলোনা।

অনেক শিখা পুড়ে তবে

এমন প্রদীপ জ্বলে

অনেক কথার মরন হলে হৃদয় কথা বলে

না না চন্দ্র হারে কাজল ধোয়া জল ফেলোনা।

একেই তো এই জীবন ভরে

কাদের বোঝাই জনে

আজ পৃথিবীর ভালবাসার

সময় গেছে কমে

না না একটু ফাগুন আগুন দিয়ে না জ্বেলোনা।

সুন্দরী গো দোহাই দোহাই মান করোনা

আজ নিশীথে থাকো কাছে

না বোলোনা।"

To be continued...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url